বর্তমানে রেলের যাত্রী বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ১০০টি কোচ মেরামত করে রেলপথে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু কোচ মেরামতের জন্য যে টাকা চাওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি বিজি (ব্রডগেজ) এবং ৫০টি এমজি (মিটার গেজ) যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কোচ মেরামত করা হবে।
প্রতিটি কোচ মেরামতের জন্য চাওয়া হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যেগুলো সর্বোচ্চ ১২ বছর ব্যবহার করা যাবে।
অন্যদিকে একটি নতুন কোচের দাম চার কোটি টাকা, যার অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৩০ বছর।
ফলে পুরনো কোচ সংস্কারের চেয়ে নতুন কোচ কেনাই লাভজনক বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
নতুন কোচ না কিনে পুরনো কোচ মেরামতের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে কমিশন। একটি ক্যারেজ পুনর্বাসনে কী কী যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ক্যারেজ পুনর্বাসনের জন্য কোন কোন যন্ত্রপাতি কেনা হবে, এগুলোর আনুমানিক মূল্য কত এবং এগুলোর টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) উল্লেখ করতে বলেছে কমিশন।
প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি টাকা। প্রকল্প অনুমোদনের পর তিন বছরে ১০০টি কোচ সংস্কার করতে চায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদের সভাপতিত্বে প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩ মার্চ ভার্চ্যুয়ালি ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা শেষে নতুন ক্যারেজ না কিনে পুরনো ক্যারেজ পুনর্বাসনের যৌক্তিকতা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) পটভূমিতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন আল রশীদ বাংলানিউজেকে বলেন, নতুন কোচের খরচ ৪ কোটি টাকা, যার আয়ু ৩০ বছরের বেশি। অন্যদিকে পুরনো কোচ মেরামতের পর ১০ থেকে ১২ বছর চলবে। সেই হিসাবে মনে করি, কোচ মেরামতের চেয়ে কেনাই ভালো। তবে কোনটা ভালো হবে তা আমরা যাচাই করে দেখবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
নতুন কোচ কেনা এবং পুরনোগুলো মেরামতের মধ্যে কোনটি লাভজনক হবে সে বিষয়ে ব্যয়ের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে রেলওয়ে।
বাংলাদেশ জানিয়েছে, বর্তমানে সৈয়দপুর কারখানায় নতুন কোচ তৈরি করা সম্ভব নয়। পুরনো কোচ মেরামত করে ব্যবহারের পর আবারও মেরামতের সুযোগ থাকবে। সে ক্ষেত্রে নতুন কেনার চেয়ে মেরামতই লাভজনক।
কোচ মেরামত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস. এম. সল্লিমুল্লাহ বাহার বলেন, প্রকল্পটি প্রাথমিক অবস্থায় আছে। এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বহরে ৪৬৭টি বিজি ও ২৫৩টি এমজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ চলমান। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব খাতে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকা, ৬৮ শতাংশ জনবল ঘাটতি ও বয়সোত্তীর্ণ কোচ দিয়ে সিডিউল যথাসময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না। ফলে যাত্রীবাহী কোচের সঙ্কট চলছে।
জানা গেছে, সৈয়দপুর কারখানার জনবল দিয়ে অফিস সময়ের পরে কোচ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করা হবে। সৈয়দপুর কারখানায় বছরে ১০০টি কোচ পুনর্বসান সম্ভব বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।
এর আগে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬০টি (১১০টি বিজি ও ৫০টি এমজি) যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।