দেশের অপরাধ ঠেকাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে মাঠে এলিট ফোর্স র্যাব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে পাঁচ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান যে কোনো মূল্যে নির্বিঘ্ন করতে ‘ওআইভিএস’ (অনসাইট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম)-এর ওপরই বিশেষ ভরসা র্যাবের। সংক্ষেপে ‘ওআইভিএস’কে র্যাব সদস্যরা বলছেন ‘ওভিস’। এর বাইরেও মাঠে রাখা হয়েছে পোর্টেবল এক্স-রে মেশিন, কমান্ড পোস্ট ক্যারাভান। সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব ব্যাটালিয়নে এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে ‘ওআইভিএস’ নামক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-সংবলিত এ ক্ষুদ্র যন্ত্রটি। সন্দেহভাজনদের আঙুলের ছাপ স্ক্যান করে র্যাব সদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হচ্ছেন মুহূর্তেই। জানা গেছে, দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রস্তুত ওভিস নামের এ অত্যাধুনিক যন্ত্রটি এরই মধ্যে অপরাধীদের কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের কোম্পানিগুলোতে একটি করে ‘ওভিস’ মেশিন দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব পেট্রোলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
এ ডিভাইসে কারও আঙুলের ছাপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বিভিন্ন সার্ভারে কানেক্ট হয়ে যাচ্ছে। এখানে এনআইডি, পাসপোর্ট, জেল, অপরাধ-সংক্রান্ত তথ্য, ইমিগ্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের তথ্য ছাড়াও রোহিঙ্গা কি না তাও জানা যাচ্ছে। র্যাবের উদ্যোগে এ প্রযুক্তির সফটওয়্যার বাংলাদেশেই তৈরি। শুধু ডিভাইসটি (পস মেশিনের মতো) দেশের বাইরে থেকে আনা হয়েছে। এ ডিভাইসটি মোবাইল এবং ওয়াইফাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে। মোবাইল ফোনের মতো সহজে বহনযোগ্য। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘ওআইভিএস’ প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক অবস্থায়ই এ সিস্টেম ব্যবহার করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের লাশ, বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী মো. হেলাল উদ্দীনের খণ্ডিত লাশসহ বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে র্যাবের এ প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আঙুলের ছাপ নেওয়ার প্রযুক্তি প্রসঙ্গে জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন বলেছেন, অপরাধীরা তথ্য গোপন করে থাকে। এটি ফরেনসিক পরীক্ষার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এর ফলে সব ধরনের তথ্য সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। অপরাধীরা অপরাধ করতে পারবে, তবে লুকিয়ে থাকতে পারবে না। এর মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশের পরিচয় সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, পোর্টেবল এক্স-রে (সহজে বহনযোগ্য) মেশিনের মাধ্যমে চলাচলরত মানুষকে স্ক্যান করা হচ্ছে। তার শরীরে থাকা সবকিছুই ভেসে উঠছে মনিটরে। তবে যাকে স্ক্যান করা হচ্ছে তিনি কোনো কিছু টেরই পান না। কমান্ড পোস্ট ক্যারাভান দিয়ে নির্দিষ্ট এলাকার টেলিযোগাযোগসহ অনেক সাইবার অপরাধেরই নজরদারি করতে পারছে র্যাব ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওআইভিএস’ পর্যায়ক্রমে র্যাবের প্রায় সব টহল দলকেই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড রাজধানীতে কাজ করতে সব সময়ের জন্যই প্রস্তুত রাখা হয়েছে।