প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করে বলেছেন যে, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত মৈত্রী সেতু দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখবে।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে দুই দেশের সীমান্তে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যৌথভাবে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়ালি) ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এই সেতু আমাদের দু’দেশের মধ্যে শুধু সেতুবন্ধনই রচনা করবে না বরং ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। শুধু চট্টগ্রাম পোর্ট নয়, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ত্রিপুরাবাসী ব্যবহার করতে পারবে।
মৈত্রী সেতু শুধু ভারতের সঙ্গে নয় নেপাল, ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১০ সালে ত্রিপুরার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ফেনী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য এই ব্রিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনুরোধটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করি। তারপর থেকে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় পক্ষকে সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করে আসছে।
‘১০ বছর পর আজকে এই সেতুটি একটি বাস্তবতা। এই সেতুটি উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য একটি বাণিজ্য লাইফলাইন হবে। আপনারা সবাই জানেন পণ্য পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেনী সেতু চালুর মধ্য দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের ল্যান্ডলকড রাজ্যগুলো বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারে। আগে ১৬০০ কিলোমিটার দূরে আগরতলার নিকটতম সমুদ্র বন্দর ছিল কলকাতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলার নিকটতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ১শ কিলোমিটারেরও কম।
শেখ হাসিনা বলেন, সন্দেহাতীতভাবে, এটি একটি ঐতিহাসিক মহত্ব। ভারতকে কানেকটিভিটি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছে। আমরা এমন একটি অঞ্চলে আছি যেখানে কানেকটিভিটি চালুর বিষয়ে রক্ষণশীল ছিল এবং যেখানে সম্ভবনার চেয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য অনেক কম। আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাগুলো ব্যবসার ক্ষেত্রে ভৌত বাধা হওয়া উচিত নয়।
বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ফেনী মৈত্রী সেতু ত্রিপুরা এবং আশপাশের ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করবে বলে আশা করছি। আমরা আশা করি, মৈত্রী সেতুর আশপাশের এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের জীবন-জীবিকার উন্নতিতে অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রবৃদ্ধির গতিপথ বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রতিবেশী করে তুলেছে। বৈশ্বিক টেক্সটাইল শিল্পের অন্যতম নেতা হিসেবে আমরা আমাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র পথ তৈরি করেছি এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে কানেকটিভির কেন্দ্র হিসেবে এর অবস্থানগত সুবিধা সর্বাধিক করতে প্রস্তুত।
মৈত্রী সেতুর সফল পরিচালনা এবং ব্যবহার প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মৈত্রী সেতু এমন এক সময় উদ্বোধন করছি যখন আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষ উদযাপন করছি।
তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে ভারত-বাংলাদেশের জন্য তাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছিল, আজকে আমরা এক সঙ্গে সমৃদ্ধ অঞ্চল তৈরি করছি।
ত্রিপুরাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভুলি নাই ১৯৭১ সালে কিভাবে আমাদের জনগণকে আপনারা আশ্রয় দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়েছিলেন, সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমরা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম। কাজেই আজকের দিনে আমি সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রী আপনাকেও আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।