স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন যে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য মারা যাচ্ছেন, ২০২০ সালে বিভিন্ন অবস্থায় পুলিশের বিভিন্ন পদের ৪৫৭ জন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে ২০৮ জন কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গ করেছেন।
আমি নিহত ও মৃত্যুবরণকারী শোক সন্তপ্ত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি শোক-সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আজ সোমবার (১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন। ২০২০ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গকে স্বীকৃতি স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০২০ সালে ২০৮ জন পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যের আন্তরিকতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগ দিয়ে দায়িত্ব পালনে যে নজির স্থাপন করেছেন, এজন্য পুলিশ বাহিনীরসহ সারাদেশ আজ উপকৃত।
তিনি বলেন, রোবরার (২৮ ফেব্রুয়ারি) আমরা দেখলাম, প্রেসক্লাবের সামনে একা একজন পুলিশকে পেয়ে কিভাবে পেটানো শুরু হয়েছিল। তা সবাই দেখেছেন। সেখানে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্যদের আন্তরিকতা কর্মনিষ্ঠা এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করার মতো চরম ত্যাগে দায়িত্ব পালনে যে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন সেজন্য পুলিশ বাহিনীসহ সারাদেশবাসী আমরা গর্বিত। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধান যে কাজটি দরকার সেটি আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশ কিন্তু সেটা সঠিকভাবে করে যাচ্ছে। তবে সেই কাজটি যদি মুখ থুবড়ে পড়ে তবে মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাও। পুলিশ শুধু আজকে নয় সব সময় পুলিশ তাদের অর্পিত দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে আসছে।
করোনাকালের চিত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছিলাম, তখন আমাদের কাছে করোনার কোনো প্রতিষেধক ছিল না। করোনায় মৃত্যুবরণকারী মায়ের মরদেহ হাসপাতাল থেকে সন্তান যখন নিতে আসছিল না, তখন পুলিশ সদস্যরাই সেই মায়ের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেছে। করোনায় দুস্থ অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।
বর্তমান সরকার সর্বদায় পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে পুলিশ সদস্যদের পরিবারের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রত্যেক পরিবারকে এককালীন ৮ লাখ টাকা প্রদানে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এছাড়া চাকরিরত অবস্থায় স্থায়ী অক্ষম ও অবসরে গেলে ৪ লাখ টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপির শিবির ও হেফাজত ও দুর্বৃত্তদের হামলায় বিভিন্ন পদমর্যাদার ২৮ জন সদস্যের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার আর্থিক অনুদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সাল থেকে আজীবন রেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৯ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ১৭৯ জন মারা গেছে। এদিকে ২০২০ সালে মৃত্যু হয়েছে ২০৮ জন পুলিশ সদস্যের। মহামারি করোনা ভাইরাসের বছরে মৃত্যুর হার একটু বেড়ে গেছে। আমি মৃত্যুবরণ করা পুলিশের সকল সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করেন। বাংলাদেশ পুলিশ যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম। তারা এই সক্ষমতা অর্জন করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, থানায় গিয়ে কোনো ব্যক্তি ঘটনা বললে সেটার উপর ভিত্তি করেই মামলা হয়। সেখান থেকে পুলিশ মানুষকে সস্তি দিতে শুরু করে। জনমানুষের সবচেয়ে কাছের জন হলো পুলিশ। এজনই আমরা বলি, পুলিশ হবে জনতার পুলিশ হবে মানবিক।
সচিব বলেন, করোনাকালে পুলিশ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। আমরা পেরেছি। বিশ্বের অন্য কোনো দেশ এমনভাবে করোনা ভাইরাসের মোকাবিলা করতে পারেনি, আমরা পেরেছি।
২০২০ সালে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সম্মানার্থে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১ অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারবৃন্দসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।