এগিয়ে আসছে একুশে বইমেলার ক্ষণ। অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা, স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিকদের কাজের গতি দেখেও সেটাই বোঝা যায়। খোঁড়াখুঁড়ি, হাতুড়ি-পেরেকের ঠোকাঠুকি এবং রঙ-ব্রাশের মাখামাখিই বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের মেলা— অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘ এক মাসের এ আয়োজন সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। শ্রমিকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল বানানোর কাজে। কেউ মাটিতে গর্ত করছেন, আবার কেউ পুঁতছেন বাঁশ। কেউ আবার সেগুলো সাজিয়ে বাঁধছেন।
অন্য বছরের তুলনায় এবার বাড়ানো হয়েছে মেলার পরিসর। বাড়ছে স্টল ও প্রকাশনীর সংখ্যাও। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে হবে এবারের বইমেলা। এছাড়া, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের বইমেলা একটু বেশিই বিশেষ। মেলার আনুষ্ঠানিকতাও হবে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে। আয়োজনেও আনা হবে বৈচিত্র্য। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে থাকবে বিভিন্ন আসর ও সাহিত্যালোচনা। করোনা ভাইরাসের শঙ্কার মধ্যেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে স্বাস্থ্যবিধি মানায় কড়াকড়ি থাকবে। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষ— সবকিছুই উঠে আসবে এ বইমেলায়। মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ এবং শেষ হবে ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ বরণের মধ্য দিয়ে। সে সময়ে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবারের মেলায় আগতদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও থাকবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আমরা মুজিববর্ষকে ধারণ করে এবারের বইমেলায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে প্রাধান্য দেব। বইমেলার এবারের থিম ‘হে স্বাধীনতা’। বইমেলাজুড়ে থাকবে একুশের চেতনা। এছাড়া, এবারের মেলায় কয়েকটি দৃশ্যগত পরিবর্তন আসবে। বিশেষত ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে, ফলে পাঠক-ক্রেতা হিসেবে যারা আসবেন, সবাই যেন দুর্যোগে একটি নিরাপদ আশ্রয় পান সেটির জন্যও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। ’
এদিকে, টিএসসি চত্বর থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পুরোদমে চলছে মেট্রোরেলের কাজ। সেজন্য একরকম বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ। এ কার্যক্রম অগ্রাধিকার দিয়ে এবং এটা মেনে নিয়েই হবে এবারের মেলা। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় থাকবে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি।
এবার মেলায় প্রথমবারের মতো প্রবেশদ্বার হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেটটি। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বাকি দুই প্রবেশপথ হবে টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের মন্দির সংলগ্ন গেইট।
এ প্রসঙ্গে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘মেলার আগে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মার্চ মাসে মেলা হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। কারণ এ সময় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রকাশক, লেখক, পাঠকসহ সবার সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর মেলা করতে চাই। ’