প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টিকা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিসভায় অনির্ধারিত আলোচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যেই আন্ত মন্ত্রণালয় সভা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে পর্যালোচনা করা হবে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে।
এদিকে দেশে ভ্যাকসিন (টিকা) উৎপাদন ও ভ্যাকসিন সম্পর্কিত গবেষণা, প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা পেতে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনপ্রক্রিয়া আরো সহজভাবে করা যাবে।
আইভিআই চুক্তি অনুসমর্থনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর ইউনাইটেড ন্যাশন ডেভেলপমেন্টের প্রগ্রামের উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী দেশ। তবে পূর্ণ সদস্যের জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অনুমোদনের দরকার ছিল, সেটা এখন হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম আরো বলেন, এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা কাজে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা পাওয়া যাবে। এতে দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতাও বাড়বে। ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রয়োগ ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো যুগোপযোগী হবে। কম দামে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। আর ভ্যাকসিনের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যোগ্যতা অর্জনের পথও আমাদের সুগম হবে, যা বিদেশে বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘আমাদের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বিশ্বে প্রমাণিত। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এগুলো অর্জন করতে পারব।’ এ সময় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, গ্লোব বায়োটেক এখনো ট্রায়াল শেষ করেনি। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে ক্যাবিনেটে। তারা যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে করতে পারে, তাহলে তো সমস্যা নেই।
পেটেন্ট আইন: পেটেন্ট (স্বত্ব) না মানার শাস্তি বাড়ছে। শাস্তি বাড়িয়ে ‘বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২১’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে গতকালের মন্ত্রিসভা। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ১৯১১ সালের পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন দিয়ে এত দিন চলছিল। ২০১৬ সালে এই আইনটিকে দুই ভাগ করে একটি পেটেন্ট আইন, আরেকটি ডিজাইন আইনের খসড়া করা হয়। খসড়া আইন অনুযায়ী, পেটেন্ট মালিক ২০ বছরের জন্য পেটেন্ট রাইট পাবেন। ২০ বছর পর এটা পাবলিক সম্পদ হয়ে যাবে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, এই আইনের আদেশ পালনে কেউ ব্যর্থ হলে ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ প্রস্তাব করা হয়েছিল। এটাকে পাঁচ লাখ থেকে ১০ লাখে উন্নীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন : গতকালের বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, আগের আইনের অধীনে ডিজাইন এবং ট্রেড মার্কস রেজিস্ট্রার অধিদপ্তর ছিল, সেটা বহাল থাকবে। এই অধিদপ্তরের অধীনে একটি শিল্প ইউনিট থাকবে। এই আইনের অধীনে শিল্প-নকশা নিবন্ধনসংক্রান্ত সব কার্যক্রম হবে। তিনি বলেন, আইনের অধীনে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং ফি প্রদান সাপেক্ষে শিল্প-নকশার নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। কারো যদি এক্সক্লুসিভ এক্সট্রা অর্ডিনারির প্রয়োজন পড়ে, আবেদন করলে আরো পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হবে।
একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।
এ ছাড়া গতকালের মন্ত্রিসভায় জাতীয় আর্কাইভস আইন-২০২১-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তির প্রস্তাবিত খসড়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর এবং ভারতের নয়াদিল্লির জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়টি মন্ত্রিসভাকে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।