আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। চন্দ্রের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী শ্বেত শুভ্র দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। একইসঙ্গে বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী।
ধর্মীয় মতানুসারে, শুভ্র রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও সুরের দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন। মর্ত্যলোকে ভক্তরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললোচনে/বিশ্বরূপে বিশালাক্ষ্মী বিদ্যাংদেহি নমোহস্তুতে’ মন্ত্র পাঠ করে অর্চনা করবেন দেবী সরস্বতীর।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সরস্বতী পূজা দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ধর্মীয় উৎসব। ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে এ উৎসবে সবার অংশগ্রহণ এ দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও ঐতিহ্যে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
তিনি বলেন, জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই মানবসভ্যতা ক্রমান্বয়ে বিকশিত হচ্ছে। জ্ঞানার্জনে সরস্বতী দেবীর কৃপা অর্জনের লক্ষ্যেই ভক্তরা এ পূজা করে থাকেন। জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মানুষ সাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞানতা, কূপমণ্ডুকতা থেকে মুক্ত হয়ে একটি কল্যাণকর ও উন্নত সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছেন। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এ দেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা সব ধর্মের উৎসব সবাই মিলে আনন্দ-উৎসব সহকারে উদযাপন করি। কাউকে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দেব না। আগামী দিনে সব ধর্মের পারস্পরিক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় হবে।
তিনি বলেন, দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। আমি দেবী সরস্বতীর পূজা অর্চনা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশের অগ্রযাত্রায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। সবার প্রতি অনুরোধ, আপনারা করোনা ভাইরাসের এ সংকটময় সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজা উদযাপন করবেন।
মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসায় ও মন্দিরে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজার আয়োজন হচ্ছে না।
তবে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি, আলোকসজ্জার মাধ্যমে উদযাপিত হবে সরস্বতী পূজা।