প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কারও কোনো কথায় কান দিলে চলবে না। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। এ নিয়ে অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়। কোনো দিকে কান দিলে চলবে না। মানুষের ভয়টা দূর করতে হবে।
‘ইতোমধ্যেই টিকা দেওয়া আমরা শুরু করেছি, ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। অনেক কথা তো শুনতে হয়, এসব কথায় কান দিলে চলবে না। অনেকেই তো বলেছে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু ভ্যাকসিন পায়নি। আমি কিন্তু কোনো দিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ সব থেকে বড়, মানুষের জীবন বড়। আমরা প্রথম ভ্যাকসিনের জন্য টাকা দিই, এক হাজার কোটি টাকা আলাদা রেখে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভান্স করে দিয়েছিলাম যখনই উৎপাদন হবে, বিশেষজ্ঞরা অনুমোদন দেবে তখনই যেন বাংলাদেশ পায় এবং সেটাই আজ প্রমাণীত সত্য।
আমি ভারতকে ধন্যবাদ জানাই তারা আমাদের ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার দিয়েছে। এখন অনেকেই দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু আমাদের যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা নিয়ে এসেছি। মানুষের মাঝে প্রথম দিকে দ্বিধা ছিল এখন সে দ্বিধাটা নেই। তারপরও যুবলীগের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা বলেছি, বিশেষ করে ৪০ বছরের উপরে যারা শিক্ষক, চিকিৎসক অন্যান্য যারা সব সময় মানুষের পাশে কাজ করতে হয় তাদের আগে দিতে হবে। সব সময় মানুষের মাঝে ভয়টা দূর করতে হবে, সবাই যেন ভ্যাকসিন নেয় সে ব্যবস্থা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবে এই ভ্যাকসিনটা নেওয়ার পর কিন্তু মাস্ক খোলা যাবে না। মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। টিকা নেওয়ার পরও কিন্তু মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, হাত পরিষ্কার করতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে। ’
এসময় যুবলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগকে আমি ধন্যবাদ জানাই তারা করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, মাস্ক বিতরণ করেছে। যুবলীগ কর্মীরা মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা মরদেহ দাফন করেছে, কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে, কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরাও এ ধরনের কাজ করেছে। যুবলীগের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সে রোগীদের আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল যাতে বাজারজাত করতে পারে যুবলীগ কর্মীরা সে ব্যবস্থা করেছে। মানবিক দায়িত্ব পালনের জন্য আমি যুবলীগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশ কেমন হবে তার পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছি। আগামী একশ অর্থাৎ দুই হাজার একশ বছরে বাংলাদেশ কেমন হবে তার জন্য ডেল্টা প্ল্যান করেছি। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। এজন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ করেনি। শুধু নিজেদের কল্যাণ করেছে। আমি জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়ার কথা বলছি, এরা কেউই মানুষের জন্য কিছু করেনি। নিজেদের ভাগ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিল।
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি যুবলীগ নেতাকর্মীদের বলতে চাই, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের সাহায্যে কাজ করে গেলে সেই সংগঠন টিকে থাকে। আদর্শভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মুজিববর্ষের কর্মসূচি পালন করছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মানুষের ঘর করে দিচ্ছি। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। ২৬ মার্চ থেকে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রবেশ করবো। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা নির্দিষ্ট করেছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করবো। যেহেতু করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা কর্মসূচি পরিবর্তন করেছি সেখানে আমরা জনসমাগম বাদ দিয়ে মানুষের কল্যাণমুখী কাজ করবো।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ। আলাচনা সভা পরিচালনা করে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।