‘সমাজে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে মনে করেন, দেশের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। ধর্ষণের শাস্তির পরিমাণ কমানো হলে বেশি অপরাধী শাস্তি পাবে বলেও মনে করেন তিনি।’ জার্মানির প্রভাবশালী গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমনটাই দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ১০০ বছরে যত গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে শাস্তি বাড়ালে যে অপরাধ কমে এই ধারণার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় অপরাধের শাস্তি অনেক বাড়ানো হয়েছে। ৫-১০ বছর পরে দেখা গেছে শাস্তি বাড়ানোর কারণে অপরাধ কমেছে এমন কোনো নজির নেই। বাংলাদেশে গণধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ২০ বছর আগেই করা হয়েছিল। কিন্তু আজকাল তো দেখছি গণধর্ষণ বাড়ছে। মৃত্যুদণ্ড দিয়ে, শাস্তি বাড়িয়ে হয়তো অস্থায়ীভাবে দুই-চার-পাঁচ মাসের জন্য অপরাধ কমানো যায়। কিন্তু এটা যে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না তা দুনিয়াতে ১০০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত।
তার মতে, ‘শাস্তির ভয়ে যদি লোকে অপরাধ থেকে বিরত থাকত, তাহলে তো দুনিয়ার সব দেশেই শাস্তি বাড়িয়ে দিলে সব অপরাধ চলে যেত। যায়না। এর অন্য সামাজিক কারণ বুঝতে হবে। আমার দৃষ্টিতে ইদানিং দেশে যারা শক্তিশালী এবং যারা দুর্বল তাদের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেড়ে গেছে। যারা শক্তিশালী তারা আরো অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যারা দুর্বল তারা আরো অনেক দুর্বল হয়েছে। অন্তত শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী পুরুষ একটা দুর্বল নারীকে ধর্ষণ করে। আমরা এখন আরো দেখছি যে শিশু ধর্ষণের হার বেড়ে গেছে। এই যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এটা আমার দৃষ্টিতে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা কমাতে হবে।ক্ষমতাসীন দলের সাথে থাকলে সাত খুন মাফ। মাঝে মাঝে কিছু হুলুস্থুল হচ্ছে। বছরে হাজার বা লাখো অপরাধ হচ্ছে। তারমধ্যে দুই-চার-দশ বা বিশটা ক্ষমতাসীন অপরাধীর শাস্তির ব্যবস্থা করে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা কমছে না।’