করোনা যেন বদলে দিচ্ছে সকল রীতিনীতি। মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে মিছিল ও শোভাযাত্রা বন্ধ থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি এবং সব সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।
এছাড়া, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবার পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় কোভিড থেকে সুস্থ হওয়া পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ডিএমপি সদরদপ্তরে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর এলাকার নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
সভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত আকারে করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানস্থলে মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে দর্শনার্থীদের পূজামণ্ডপে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সমন্বয় সভায় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে ডিএমপির গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে-
দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির সময়, পূজা চলাকালীন ও বিসর্জনের সময় মোবাইল পেট্রোলের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা, ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকাভিত্তিক পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবেন।
পূজামণ্ডপ ও আশপাশে পকেটমার, ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে পুলিশের টহল ডিউটি থাকবে। দুর্গাপূজার সময় সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করা হবে। এছাড়া গুরুত্ব বিবেচনায় পূজামণ্ডপগুলো ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসোপোজাল ইউনিট দিয়ে সুইপিং করানো হবে।
পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনারর মধ্যে রয়েছে-
চলাচল স্বাভাবিক রাখতে রাস্তায় কোনো ধরনের মেলা বসতে দেওয়া হবে না। রমনা কালী মন্দিরের সামনের রাস্তায় মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা থাকবে।
বিসর্জনের দিন যে সব রুট দিয়ে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হবে সে সব সড়কে রাস্তা/ফুটপাতে হকার, রাস্তায় কোনো প্রকার মালামাল লোড ও আনলোড করতে এবং কোনো যানবাহন পার্কিং করতে দেওয়া যাবে না।
পূজামণ্ডপকেন্দ্রিক আয়োজকদের প্রতি নির্দেশনা-
পূজামণ্ডপে প্রবেশপথে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বেসিন, পানির ট্যাংক, সাবান এবং আলাদাভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা, থার্মাল স্ক্যানার ও জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনোক্রমেই মাস্ক ছাড়া কাউকে পূজামণ্ডপে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
পূজামণ্ডপগুলোতে সামাজিক দূরত্ব কমপক্ষে তিন ফুট কঠোরভাবে বজায় রাখতে প্রয়োজনে মণ্ডপের অভ্যন্তরে ফ্লোর মার্কিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।
পূজামণ্ডপে আলাদা প্রবেশ ও বাহির গেট, আর্চওয়ে, সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ভিডিও রেকর্ডিং নিশ্চিত করাসহ মেটাল ডিটেকটর দিয়ে যথাযথভাবে দেহ তল্লাশির জন্য, পর্যাপ্ত পুরুষ ও নারী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে হবে। পূজামণ্ডপগুলোতে একমুখী চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
করোনাকালীন বিশেষ পরিস্থিতিতে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের পূজামণ্ডপে আসতে নিরুৎসাহিত করতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজা উদ্বোধন উপলক্ষে সীমিত লোক সমাগম করে অনুষ্ঠান করতে হবে।
ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও অনলাইনে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। পূজা শেষে লোক সমাগম করে কোনো সমাপনী অনুষ্ঠান করা যাবে না।
পূজা উপলক্ষে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, সার্কাস ইত্যাদি আয়োজন করা যাবে না এবং উচ্চ শব্দে বাজনা বাজানো নিরুৎসাহিত করাসহ পটকা ও আতশবাজি না ফোটানো নিশ্চিত করতে হবে।
শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন পরিহার করতে হবে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। শুধু বিসর্জনকালীন প্রতিমা বহন করার জন্য একটি ট্রাকে ন্যূনতম সংখ্যক লোক থাকবে। এছাড়া অতিরিক্ত ট্রাক/গাড়ি বা লোক থাকতে পারবে না। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সমন্বয় সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, আনসারের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি ও বাংলাদেশ রামকৃষ্ণ মিশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।