প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ে উদাত্ত আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা খাতে পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ব্যবহার করছে বাংলাদেশ।’
জাতিসংঘ সদরদপ্তরে চলমান ৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম কমিটির (নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক) সাধারণ বিতর্কে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদাহরণ টেনে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পরমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের সুবিধাই কাজে লাগিয়েছে। ’ এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার সর্বোচ্চ মান মেনে চলার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
পারমাণবিকসহ পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের প্রতি বাংলাদেশের সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘এ নীতি-আদর্শ উৎসারিত হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে, যে ভাষণে জাতির পিতা ‘বিশ্বে উত্তেজনা হ্রাস, অস্ত্র প্রতিযোগিতা সীমিত করা এবং পৃথিবীর প্রত্যেক স্থানে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান নীতি জোরদার করা’ বিষয়ে সবাইকে সমবেত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ’
পরমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, পরমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তি, রাসায়নিক অস্ত্র বিষয়ক সমঝোতা, জীবাণু অস্ত্র বিষয়ক সমঝোতা, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংস্থা, ব্যাপক-ভিত্তিক পরমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি, অস্ত্র-বাণিজ্য চুক্তিসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সব প্রধান নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক চুক্তি ও পদক্ষেপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ, একথা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব চুক্তি ও পদক্ষেপ স্বাক্ষর ও অনুমোদনের জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
রাষ্ট্রীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষের দ্বারা হিংসাত্মক কাজে তথ্য-প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘এর ফলে উন্নত এ ডিজিটাল পৃথিবীর আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হচ্ছে। ’ তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
যোগাযোগ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু সাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘মহাকাশে এখন বাংলাদেশ আরও বেশি অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রবেশ করেছে। ’ তিনি মহাকাশকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, টেকসই, উন্মুক্ত, প্রবেশযোগ্য ও অস্ত্রমুক্ত রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক প্রদক্ষেপগুলো আরও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবে। ’
কোভিড-১৯ জনিত কারণে সামাজিক দূরত্ব মেনে সদস্য দেশগুলোর সর্বনিম্ন উপস্থিতির মাধ্যমে স্বল্প-পরিসরে এবারের সাধারণ পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।