বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা। এই ভাইরাসের বিরামহীন তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমধার রাষ্ট্র আমেরিকা। এর প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ব্রিটেন, ব্রাজিল, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলো। এছাড়া বর্তমানে করোনাপার হটস্পটে পরিণত হয়েছে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত।
বাংলাদেশেও তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তবে এবার বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি লাগামহীন হয়ে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে । বাংলাদেশের কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত দক্ষিণ এশিয়ান বিষয়ক লেখিকা সোফি কাজিন্স তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থা এখনও আসেনি।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, একদিকে বর্ষা। অন্যদিকে ডেঙ্গু। এর ভেতর আবার করোনা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশজুড়ে লাগামহীনভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ল্যানসেটের প্রতিবেদনে করোনা পরীক্ষার জন্য সরকার যে ফি নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে তার সমালোচনা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফি নির্ধারণের পর পরীক্ষার হার কমে প্রতিদিন ১ হাজার মানুষে ০.৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আগস্টে প্রতি এক হাজার মানুষে ০.৬ হারে টেস্ট হয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এমিনেন্সের প্রধান শামীম তালুকদার দ্য ল্যানসেটকে বলেন, এই মহামারী বাংলাদেশের ‘অনৈতিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে’ উন্মোচিত করেছে।
‘একদম শুরু থেকেই সরকার কোভিড-১৯ টেস্টিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে,’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘শুরুতে বেসরকারি খাতকে টেস্ট করতে দেওয়া হয়নি। এখন আবার ফি নেওয়া হচ্ছে। এতে গরীব মানুষরা বাদ পড়ছেন।’
তালুকদার ঢাকার কয়েকটি কবরস্থান ঘুরে সেখানকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কবরস্থান পরিচালনাকারীরা তাকে বলেছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে দেশে চারগুণ বেশি মৃত্যু হচ্ছে। অনেকে উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন, কিন্তু করোনা পরীক্ষা হয়নি।
বাংলাদেশের আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমানও টেস্টের জন্য ফি নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া সত্যি সমস্যা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে গরীবদের জন্য টেস্ট করানও এখন কষ্টকর।’
‘মহামারীর সময়ে মানুষের কাজ নেই। টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারের টাকা নেওয়া উচিত হচ্ছে না।’
ঢাকার আরেকজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ল্যানসেটকে বলেন, ‘১৬৫ মিলিয়ন মানুষের দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টেস্ট হচ্ছে, এটি আসলে কিছুই না।’
ওই চিকিৎসকের শঙ্কা, ‘এই মহামারী আরও অনেক দিন থাকবে। আমি ভয় পাচ্ছি শীত আসলে কী হবে। মানুষও ভয় পাচ্ছে।’
শামীম তালুকদার বলছেন, ‘সরকারের নজর এখন অর্থনীতির দিকে। কিন্তু কোভিড-১৯ গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে। মারা যাবে আরও বেশি মানুষ।’
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক ব্যবস্থার ওপর প্রতিবেদন করে ২০১৯ সালে মেডিকেল জার্নালিস্ট’স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পুরস্কার জেতা সোফির সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৯৪ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ১৭৪ জন।