প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন যে, মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের সব ঘরে আলো জ্বালানো হবে। তিনি বলেছেন, ‘মুজিববর্ষে ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সব ঘরে আলো জ্বালাব।’
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৮ জেলার ৩১টি উপজেলার শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে আরও ৩১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এলো।
পাশাপাশি দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১১টি গ্রিড সাব-স্টেশন, ছয়টি নতুন সঞ্চালন লাইনও উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন। মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ২৭টি জেলার জনপ্রতিনিধিরাও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
এর আগে ২৫৭টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই ৩১টি উপজেলা উদ্বোধনের পর মোট ২৮৮টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় এলো। এর ফলে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। শুধু বাতি জ্বেলে বসে থাকা নয়। বিদ্যুৎ থাকলে কর্মসংস্থানের ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আমরা এ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গ্রাহক বাড়িয়েছি।’
সব জায়গায় যাতে বিদ্যুৎ পৌঁছায় সেজন্য সৌরবিদ্যুতের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও যাতে বিদ্যুৎ পায়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ যা হয় তার চেয়ে কম দামে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। তাই গ্রাহকদের বলবো, অপচয় করবেন না। বিলটাও কম আসবে। এটা আমার বিশেষভাবে অনুরোধ।’
মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকার ভর্তুকিসহ সব ধরনের সহযোগিতা করছে বলেও জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায়, গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ পেতাম না। জেনারেটর চালিয়ে বাতি জ্বালতে হতো। আমরা এমন কোন বৈষম্য করিনি। যে কারণে বগুড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) জনসংযোগ পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরীর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করলেন সেগুলো হচ্ছে, কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া-১ লিমিটেডের ১১০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং নোয়াখালীর এইচ এফ পাওয়ার লিমিটেডের ১১৩ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহাস্থানগড় ১৩২/৩৩ কেভি, রাজশাহী (উত্তর) ১৩২/৩ কেভি, চৌদ্দগ্রাম ১৩২/৩৩ কেভি, ভালুকা ১৩২/৩ কেভি, বেনাপোল ১৩২/৩৩ কেভি ও শেরপুর ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশন উদ্বোধন করেন।
পাশাপাশি, তিনি ৪০০.২৩০/১৩২ কেভি গ্রিড নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শ্যামপুর ২৩০/১৩২ কেভি সাবস্টেশন, পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের আওতায় গ্রিড সাবস্টেশন এবং সঞ্চালন জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় শেরপুর ১৩২/৩৩ ও কুড়িগ্রাম ১৩২/৩৩ এবং গ্রিড সাবস্টেশন কনস্ট্রাকশন প্রকল্পের রাজেন্দ্রপুর ১৩২/৩৩ জিআইএস প্রকল্পের আওতায় রাজেন্দ্রপুর ১৩২-৩৩ সাব-স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন ঘোষণা শেষে দোয়া
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো−পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ সঞ্চালন লাইন, তিস্তা-কুড়িগ্রাম ১৩২ সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-মাগুরা নড়াইল ১৩২ সঞ্চালন লাইন এবং পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ সঞ্চালন লাইন।
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হচ্ছে−ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর, সরাইল, আশুগঞ্জ, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া, কুমিল্লা জেলার বরুড়া ও মুরাদগঞ্জ, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা ও বোয়ালমারী, গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর এবং ঝিনাইদাহ জেলার সদর উপজেলা। মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর, দৌলতপুর, সিঙ্গাইর, ও শিবালয়, মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর, নওগাঁ জেলার মান্দা, ধামরহাট, সাপাহার, নীলফামারি জেলার ডোমার, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ, রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর ও বালিয়াকান্দি, রাজশাহী জেলার বাঘমারা, সাতক্ষীরা জেলার সাতক্ষীরা, সিলেট জেলার জকিগঞ্জ এবং মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা।