মহামারি করোনাকালে উদ্বেগের মধ্যেও নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। অধস্তন আদালতের ১৮’শ বিচারক এবং ১৮ হাজার কর্মচারীর সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন তিনি। শুধু মন্ত্রণালয়েরই নয়, খবরা খবর রাখছেন ব্রাহ্মণবড়ীয়ার জাতীয় সংসদের নিজ আসনের জনসাধরণেরও। করোনাকালে তার সংসদীয় আসনের জনগণের মাঝে বিতরণ করেছেন প্রায় তিন কোটি টাকার ত্রাণ। এমনকি অতি অল্প সময়ে ভার্চ্যুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করতেও ভূমিকা রাখেন আইনমন্ত্রী।
মনিটরিং সেল গঠনঃ করোনা মহামারি রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অধস্তন আদালতের বিচারক, অধীনস্থ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং বিচারিক আদালতের ১৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথক মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে আইনমন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মর্যাদার দু’জন কর্মকর্তা মনিটরিং সেলের দায়িত্বে থাকেন উপ-সচিব শেখ গোলাম মাহবুব এবং এস. মুহাম্মদ আলী। তারা সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিচারক, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আদালতের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ের সচিবকে আপডেট দেন। সচিব মো. গোলাম সারওয়ার রাত ১০টায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে প্রতি দিনকার প্রাপ্ত তথ্য অবহিত করেন।
চিকিৎসায় হাসপাতালঃ আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সহযোগিতায় অধস্তন আদালতের বিচারকদের করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আইন ও বিচার বিভাগ পরিচালিত করোনা মনিটরিং ডেস্কের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী অধস্তন আদালতের প্রায় একশ বিচারক ও কর্মচারী করোনা ভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। বিচারকদের মধ্যে ভোলার জেলা জজের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে জানানো হলে তিনি তাকে দ্রুত ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেন। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে তাকে ভোলা থেকে এনে ইউনিভার্সেল মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়।
বিদেশগামীদের সনদ বিতরণঃ করোনাকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর ৩১ মে থেকে গত ২১ জুন পর্যন্ত তিন সপ্তাহে বিদেশগামীদের ১৫ ধরনের একহাজার ৭১৫টি সনদ সত্যায়িত করেছে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের রেজিস্ট্রেশন শাখা থেকে এসব সনদ সত্যায়িত করা হয় বলে জানিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম।
আইন মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত সনদের মধ্যে রয়েছে- বিয়ের সনদ (কাবিননামা) ২৫৩টি, অবিবাহিত সনদ ৫৫টি, বিবাহবিচ্ছেদ ২৫টি, জন্মসনদ ৪শ’টি, মৃত্যুসনদ ৬৫টি, বিভিন্ন চুক্তিপত্র ২৫টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ ১৫০টি, শিক্ষাগত সনদ ১০টি, বয়স সংশোধন সনদ ১০টি, সম্পত্তি সংক্রান্ত দলিল ২৫টি, আমমোক্তারনামা ২০টি, পাসপোর্ট ৩শটি, ফ্যামিলি সনদ ২শটি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ৩০টি এবং স্বাস্থ্যসনদ ১৫০টি।
জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম জানান, বিদেশগামীদের বিবাহ সনদ, পাসপোর্ট ও অভিজ্ঞতা সনদসহ অন্যান্য কাগজপত্র বিদেশি দূতাবাসে দেখাতে গেলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। আর আইন মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি দূতাবাসগুলো এসব কাগজপত্র গ্রহণ করে না। দূতাবাসগুলোতে এসব সত্যায়িত কাগজপত্র জমা দিলে তারা যাচাই করে দেখে। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নমুনা স্বাক্ষর বিদেশি দূতাবাসগুলোতে দেওয়া আছে।
তিনি আরও জানান, করোনার সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি পরিবহন পুল ভবনের নীচতলায় ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সনদ জমা নেওয়া হচ্ছে। সত্যায়িত করার পর আবার সেখান থেকেই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
ভার্চ্যুয়াল কোর্ট পদ্ধতিঃ গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
২ দিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যেকোনো আদালত এ অধ্যাদেশের ধারা ৫ এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যেকোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।’
অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষ বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা ক্ষেত্রমতে দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
কোনো ব্যক্তির ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা অন্য কোনো আইনের অধীন আদালতে তার সশরীরে উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা শর্ত পূরণ হয়েছে বলে গণ্য হবে।
এই অধ্যাদেশের পর সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতে ভার্চ্যুয়ালি বিচার কাজ অব্যাহত রয়েছে। পরে সংসদে বিলটি উপস্থাপন হলে গত ৮ জুলাই সেটি পাস হয়।
সংসদীয় আসনে ত্রাণ বিতরণঃ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুই মাসে (২২ মে পর্যন্ত) কসবা উপজেলায় পর্যায়ক্রমে প্রায় ৪০ হাজার কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারকে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২ হাজার ৫০টি অসহায় পরিবারের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১৮ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় দুই মাসে কেবল কসবা উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ৩৯ হাজার ৬০৫টি কর্মহীন ও হতদরিদ্র পরিবারকে ২ কোটি ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি।