মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও এ বছর হজ করতে পারবেন না নিবন্ধনকারীরা। তবে তাদের নিবন্ধন আগামী বছরের জন্য সচল রাখা এবং আগ্রহীদের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পবিত্র হজ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত’ জানাতে বুধবার (২৪ জুন) এক আন্তঃমন্ত্রণালয় অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম।
সভায় ব্যাংকে জমাকারীদের টাকা ফেরতের পদ্ধতিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন।
সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, ২০২০ সালের জন্য যাদের প্রাক-নিবন্ধনের মেয়াদ বৈধ ছিল, তা ২০২১ সালের জন্য বলবৎ থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যস্থাপনার যেসব প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তি ২০২০ সালের হজের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন তাদের নিবন্ধন ২০২১ সালের জন্য বৈধ থাকবে। নিবন্ধনকারী হজযাত্রীদের জমা করা টাকা ২০২১ সালের প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
টাকা ফেরত পাওয়ার পদ্ধতি:
মন্ত্রণালয় জানায়, নিবন্ধন বাতিলকারী হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের টাকা কোনো প্রকার কর্তন ব্যতিত ফেরত দেওয়া হবে।
সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের অর্থ সরাসরি হজযাত্রীর একাউন্টে স্থানান্তর করা হবে। কোনো হজযাত্রীর ব্যাংক হিসাব না থাকলে তার ইচ্ছানুযায়ী চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে।
আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য জমা করা অর্থ হজযাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী সরাসরি ব্যাংক থেকে অথবা এজেন্সির মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য জমা করা অর্থ আগের মতো ঢাকার হজ অফিসের পরিচালকের কাছ থেকে হজযাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী সরাসরি তার ব্যাংক হিসাবে চেকের মাধ্যমে অথবা এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে।
সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত কোনো হজযাত্রী নিবন্ধন বাতিল করে টাকা ফেরত চাইলে তা অনলাইনে অথবা হজযাত্রীর ইচ্ছানুযায়ী ফেরত দেওয়ার জন্য আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার অনুরূপ একটি নিবন্ধন বাতিল প্রক্রিয়ার সফটওয়্যার প্রস্তুত করে ই-হজ সিস্টেমে সংযুক্ত করা হবে। নিবন্ধন বাতিলে ইচ্ছুক হজযাত্রীদের স্ব স্ব নিবন্ধন কেন্দ্র থেকে নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করতে হবে। ১৩ জুলাই থেকে নিবন্ধন বাতিলে ইচ্ছুক হজযাত্রীরা আবেদন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত সফটওয়্যার প্রস্তুত ও পরীক্ষার জন্য নিয়োজিত আইটি প্রতিষ্ঠানকে এ সময় দেওয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোন হজযাত্রী পাঠানো হবে না বিধায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক কোন ভ্যাকসিন ক্রয় করা হবে না। হজযাত্রী যাবে না বিধায় ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে আহ্বানকৃত ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করতে হবে।
ভাইস মিনিস্টারের দুঃখ প্রকাশ:
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সৌদি আরব সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সৌদি আরবের বাইরে থেকে কোনো দেশের হজযাত্রী এ বছরের হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না, জানান ধর্মসচিব।
তিনি বলেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিক এবং সৌদি আরবের নাগরিকদের অংশগ্রহণে সীমিত পরিসরে হজ অনুষ্ঠিত হবে।
ধর্মসচিব জানান, রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার টেলিফোনে ২০২০ সালের হজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ সময় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ, সৌদি আরব এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি জানান, সার্বিক বিবেচনায় এ বছর বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সৌদি আরবে হজযাত্রী পাঠানো যাবে না। এ জন্য তিনি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি সমবেদনা ও আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবিএম আমিন উল্লাহ নূরীর সঞ্চালনায় অনলাইন সভায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার, জেদ্দার কাউন্সেলর (হজ), ঢাকাসহ হজ অফিসের পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।