ফল প্রকাশের সময় কমাতে ও ভোটে কারচুপি রোধ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতা বরং কোনো কোনো নির্বাচনে বেশি হচ্ছে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এবার কিউআর কোড (কুইক রেসপন্স কোড) ব্যবহারের দিকে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সকল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সময় স্বল্পতার কারণে পর্যাপ্ত ইভিএম প্রস্তুত না থাকায় সে সময় ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়। এরপর স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদে বড় আকারে এই মেশিন ব্যবহার করে ইসি। পরবর্তী বিভিন্ন উপ-নির্বাচন এবং সিটি নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ এই ভোটযন্ত্র ব্যবহার হয় ঢাকার দুই সিটির ভোটে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই ইভিএমের ফলাফল ইসি ঘোষিত দু\’তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করা যায়নি। ঢাকার দুই সিটি ভোটের ফল প্রকাশ করা হয় গভীর রাতে।
ইভিএমের ফলাফল সমন্বিত করার জন্য ব্যবহার করা হয় ট্যাব। তারপরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
বিভিন্ন সময় নেটওয়ার্ক কম থাকা, ট্যাব ও বার্তাশিটের মধ্যে গড়মিলসহ নানা কারণকে ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার পেছনে দায়ী করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
সূত্র জানিয়েছে, ফল প্রকাশে বিলম্ব বা বিঘ্ন ঘটলেও কোনো বিপর্যয় না হওয়ায় ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে অসন্তুষ্ট নয় ইসি। তবে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে ইসিকে। তাই ইভিএম থেকে প্রিন্ট হয়ে আসা ফলাফলে কিআর কোড ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এতে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসায় ফলাফল দ্রুত সমন্বয় করা যাবে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইভিএম ব্যবহার সম্পর্কিত বিশেষ কমিটির নেতৃত্বদানকারী নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে করোনাকালীন দুর্যোগের পর অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও বিভিন্ন উপ-নির্বাচনে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, গত মার্চে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের শুরুতে সভাপতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসারের নিকট ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণের ফলাফল বিলম্বে প্রকাশের বিষয়ে জানতে চান।
রিটার্নিং অফিসারদ্বয় ভোটগ্রহণের ফলাফল বিলম্বে প্রকাশের বেশ কিছু কারণ উপস্থাপন করেন। অতপর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ট্যাব ব্যবহার করে দ্রুত ফলাফল গ্রহণের বিষয়ে সভাপতি উপস্থিত সদস্যদের বক্তব্য আহবান করেন।
এতে ইসি সচিব মো. আলমগীর, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম ও সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক বেশ কয়েকটি প্রস্তাব রাখেন। আলোচনার পর সকলেই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য একমত হন। এতে ফল প্রকাশ নিয়ে চারটি সিদ্ধান্ত আসে।
(ক) যে সকল নির্বাচনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে, সে সকল নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে ইভিএমের মুদ্রিত ফলাফলের কপির কিউআর কোড ব্যবহার করে অথবা ইভিএমের অডিট কার্ড ব্যবহার করে ভোট কেন্দ্রের ফলাফল রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারে রিটার্নিং/ সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট পাঠানো হবে।
(খ) বার্তা শিটের সঙ্গে অবশ্যই ইভিএম এর প্রিন্ট কপি স্ট্যাপলার করে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসার দু\’টি ফলাফল শিট মিলিয়ে বেসরকারি ফলাফল চূড়ান্ত করবেন।
(গ) কিউআর কোড ব্যবহার করে প্রয়োজনে ইভিএম থেকে \’ঞ\’ ফরমে ফলাফল প্রিন্ট করে তা ট্যাবের মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে।
(ঘ) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ডেমো ভোটগ্রহণে বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হবে।