দেশের গণপরিবহনে শতকরা ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব (সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ) এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যানকে আজ সোমবার (১ জুন) এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নোটিশে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান লিংকন এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় জনজীবন বিপর্যস্ত। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অধিকাংশ মানুষই কর্মহীন ও বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অসচ্ছল মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়টি বিবেচনা করে এবং দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে অফিস, আদালত, কলকারখানা খুলে দিয়েছে। কর্মজীবী মানুষ যাতে কর্মস্থলে যেতে পারেন সেজন্য গণপরিবহন চালুর অনুমতি দিয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, সরকার যেখানে জনগণকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে, তখনই বিআরটিএ বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করল। সংস্থাটির এই সিদ্ধান্ত অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে আরো বেশি বিপর্যস্ত করে তুলবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ইতিহাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সময় জাতীয় অর্থনীতিকে সচল এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবনযাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্বল্পমূল্যে জ্বালানি তেল কিনে সংরক্ষণ করছে। ঠিক তখন বাংলাদেশে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে যা পুরোপুরি অযৌক্তিক।
করোনাকালে গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে গতকাল রবিবার (৩১ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করোনাভাইরাসজনিত রোগের (কভিড-১৯) বিস্তার রোধকল্পে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকল্পে সরকার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লায় চলাচলকারী (ঢাকা মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরসহ) বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া নিম্নোক্তভাবে পুনঃনির্ধারণ করে।
(ক) আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লা রুটে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ৩ মে প্রজ্ঞাপনমূলে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (যাত্রী প্রতি কিলোমিটার সর্বোচ্চ ১.৪২ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলো।
(খ) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাস বা মিনিবাস চলাচলের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিদ্যমান ভাড়ার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি যাত্রী প্রতি কিলোমিটার যথাক্রমে ১.৭০ টাকা ও ১.৬০ টাকা। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়ার বিদ্যমান হার ৭ টাকা ও ৫ টাকা) ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।
(গ) ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে ভাড়ার হার প্রতিযাত্রী প্রতি কিলোমিটার ১.৬০ টাকার ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।