মহামারী করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও দেশ থেকে করোনাভাইরাস নির্মূলে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার। এ উদ্দেশ্যে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। শিগগির একনেকে উঠছে এ চার প্রকল্প।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যে চারটি প্রকল্প একনেকে উঠতে যাচ্ছে তার মধ্যে দুটি সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসায় ভূমিকা রাখবে। অন্য দুটি প্রকল্প দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। ফলে চারটি প্রকল্পই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করোনা সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প চারটির মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে আগামী মঙ্গলবার (২ জুন) প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে। গণভবন থেকে একনেকের ভার্চ্যুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
সভায় করোনা সংকট মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রকল্প ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগেরও বেশকিছু প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে। আগামীকাল রবিবার (৩১ মে) একনেক বৈঠকে প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর এ একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ভার্চুয়াল একনেক সভা এটিই হবে প্রথম। মঙ্গলবার (২ জুন) সকাল ১০টায় শুরু হবে এ সভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী গণভবন থেকে সভায় অংশ নেবেন। বাকিরা সবাই সভায় অংশ নেবেন এনইসি সম্মেলন কক্ষ থেকে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স প্রকল্প এ একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় করোনা মোকাবিলায় সাড়ে তিন হাজার চিকিৎসক ও নার্সকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের তালিকায় আছেন স্টাফরাও। পাশাপাশি যেসব হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হবে। ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭টি আইসোলেশন সেন্টার ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটসহ ১৯টি ল্যাবরেটরি আপগ্রেড করা হবে।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় এক হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১০ কোটি ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হবে।
এছাড়া \’কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক রেসপন্স\’ নামে এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে একনেকে। এই প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট দিয়ে সজ্জিত করা, অন্তত ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা ও গুণগত মানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতের কমপক্ষে তিন হাজার ৫০০ জন কর্মীকে আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে পিসিআর মেশিন, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, পিপিই ও মাস্ক কেনার কাজে এই প্রকল্পের টাকা খরচ করা হবে।
এ ছাড়া, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সপ্তম পর্যায়ে প্রকল্প পেতে যাচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জুন ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষাকেন্দ্র, দারুল আরকাম মাদ্রাসা এবং রিসোর্স সেন্টারের কাযর্ক্রম চলমান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলা, ৫০৫টি উপজেলা, থানা ও জোনে কাজ চলমান। ৩২ হাজার প্রাক-প্রাথমিক, ৪১ হাজার কোরআন শিক্ষা এবং ৭৬৮টি বয়স্ক কেন্দ্রসহ মোট ৭৩ হাজার ৭৬৮টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শিক্ষকদের মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। সামনে তা বাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হবে। প্রাক-প্রাথমিক, সহজ কোরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা স্তরসহ মোট এক কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯৫০ জনকে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। আগ্রহী আলেমদের জন্য দ্বীন-দাওয়াত ভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং সাক্ষরতার হার আরও বৃদ্ধিতে নতুনভাবে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হবে।
এদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য \’প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়)\’ প্রকল্পটির সংশোধনী বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধে জরুরি বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে এবারই প্রথম জুতা, জামা ও স্কুল ব্যাগ কিনতে সব শ্রেণির প্রত্যেকের জন্য এককালীন এক হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।