আগামীকাল শনিবার পদ্মা সেতুর ৩০তম স্প্যান পিলারের উপর বসানো হচ্ছে। আবহাওয়াসহ সব কিছু অনুকূলে থাকলে স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ২৬ ও ২৭ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে স্প্যানটির চূড়ান্ত রঙের কাজ, হ্যান্ড রেল, স্টেয়ার, ব্যালান্স লোড স্থাপনের কাজ শেষ করা হয়েছে। ভাসমান ক্রেনে করে এটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে জাজিরা প্রান্তের ২৬ ও ২৭ নং পিলালের কাছে। ৩০তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান হবে। বাকী থাকবে দেড় কিলোমিটারের সামান্য বেশী বা ১১টি স্প্যান। তবে কোনো কারণে কাল স্প্যানটি বসানো সম্ভব না হলে পরের দিন বসানো হবে।
এই তথ্য নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, ৩০তম স্প্যানটি বসানরো পর ৩১তম স্প্যান বর্ষা মৌসুমের আগেই খুঁটির ওপর বসানো পরিকল্পনা রয়েছে। আর ৩১তম স্প্যানটি বসে গেলে জাজিরা প্রান্তের সবকটি স্প্যান বসানো হয়ে যাবে। শুধু মাওয়া প্রান্তে বাকি থাকবে ১০টি স্প্যান স্থাপন বসানোর কাজ। খুব শিগগিরই তাও সম্পন্ন করা হবে। করোনার কারণে পদ্মা সেতুর কাজের তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনার মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। করোনার কারণে পুরো প্রকল্পটিই আইসোলেটেট রাখা হয়েছে। তাই এখানকার দেশি-বিদেশি কর্মীরা অনেকটাই নিরাপদ। এখানে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থা করে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে না। বাইরের কাউকেই এখানে এখন প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এর পূর্বে গত ৪ মে ২৯তম স্প্যানটি সেতুর মাওয়া প্রান্তের ১৯ ও ২০ নং পিলালের উপর বসানো হয়। এতে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৪৩৫০ মিটার বা ৪.৩৫ কিলোমিটার। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ ভাগ। নদী শাসনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭১ ভাগ। আর সেতুর সার্বিক কাজের অত্রগতি হয়েছে ৭৯ ভাগ। স্প্যানগুলোর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২০টি মধ্যে ১০টি, জাজিরা প্রান্তে ২০টির মধ্যে ১৮টি আর মাঝের চরে বা দু জেলার মধ্যে বসেছে ১টি।
এদিকে পদ্মা সেতুর স্প্যান বহনকারী সর্বশেষ চালানটি চীন থেকে রওনা দিয়ে সমুদ্র পথে রয়েছে। যার মধ্যে ২টি স্প্যানের কম খণ্ডিত অংশ রয়েছে। যা আগামী ১৫ জুনের মধ্যে মাওয়ায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এটি এসে গেলে আর কোনো স্প্যান বাকী থাকবে না।
অপরদিকে সংশোধিত সিডিউল অনুযায়ী আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান খুঁটিতে বসে যাওয়ার কথা আছে। তবে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা মনে করছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই আগস্টের মধ্যে খুঁটির ওপর সব স্প্যান বসে যাবে। দ্বিতল সেতুর ওপরে থাকবে সড়কপথ আর নিচে থাকবে রেলপথ। যা এখন ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট ২৯টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।