তামাকজাতীয় পণ্য এবং তামাক উৎপাদন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে মর্মে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপিকে উদ্ধৃত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে পরিবেশিত সংবাদের প্রতি শিল্প মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য নিম্নরূপ:
বাংলাদেশে কভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের সূচনালগ্নে দুইটি তামাক কোম্পানির আবেদনের প্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় হতে যথাক্রমে গত ৩ এপ্রিল এবং ৫ এপ্রিল আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের আছে অনুরোধ পত্র প্রেরণ করে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ৯ এপ্রিল জরুরি সেবা ও সরবরাহ শৃঙ্গল যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাসহ পরিপত্র জারি করে। এছাড়া, মন্ত্রিপারিষদ সচিব গত ২৪ মার্চ জরুরি সেবা ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ বিষয়ে একটি প্রেসনোট জারি করেছিল।
১। সিগারেট একটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এ বিবেচনায় শিল্প মন্ত্রণালয় কভিড-১৯ সংক্রমণ চলাকালীন সময়ে তামাক কোম্পানির উৎপাদন সরবরাহ ও পরিবহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিয়েছিল।
২। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের উদ্দেশ্যের সাথে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কোনো ভিন্নতা নেই। শিল্প মন্ত্রণালয়ও প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার নীতিকে পূর্ণাঙ্গভাবে সমর্থন করে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করছে।
৩। টোব্যাকো বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সাথে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষী এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এ শিল্পখাত থেকে আসে।
৪। এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেয়া হলে, একদিকে যেমন দেশ বিরাট অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে তেমনি বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৫। ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনে-শোনেই সেবন করছেন। এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও, তারা এটি সেবন করবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধুমাত্র সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু, এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানিকৃত সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবীদের মধ্যে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।
৬। করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই বৈশ্বিক অর্থনীতির মতো বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট চাপে হয়েছে এবং আগামী দিনে অনিবার্যভাবে এই চাপ বাড়বে। করোণা প্রাদুর্ভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে রয়েছে। এতে করে প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক লোকজন বেকার হয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহন করলেও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সরকারের জন্য দীর্ঘদিন এটি চালিয়ে নেয়া কষ্টকর হবে।এই অবস্থায় বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং শিল্প উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয় মারাত্মক ক্ষতি।
৭। সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সময়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মোটিভেশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে।