সুপার সাইক্লোন আম্পান আতঙ্কে আতঙ্কিত উপকূলবাসী। তীব্রতা কিছুটা কমে গিয়ে সুপার সাইক্লোন আম্পান অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। এটি ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারিয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করবে দেশের উপকূলে। সে সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ স্বাক্ষরিত আম্পানের ২৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্পান উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ (১৯ মে ) রাত ০৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬১০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার (২০ মে) বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিমির মধ্যে বর্তমানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ২০০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এই অবস্থায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ অঞ্চলের উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ০৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা:
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা:
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ১৪০-১৬০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
জেলেদের জন্য সতর্কতা:
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এটি বুধবার (২০ মে) বিকেল/সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মধ্যবর্তী কোনো এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। ঘূর্ণিঝড়ে বর্তমান অভিমুখ অনুযায়ী এটি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও আশেপাশের এলাকায় প্রথমে আঘাত হেনে বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হবে। এতে কমে যাবে আম্পানের ক্ষিপ্রতা।
বুধবার (২০মে) রাতেই এটির তীব্রতা কমে গিয়ে ১৮০ কিমির নিচে নেমে আসবে। এরপর বৃহস্পতিবার (২১ মে) তীব্রতা আরও কমে ধীরে ধীরে এটি নিম্নচাপে পরিণত হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। তবে আগামী পাঁচদিনে সেটা আবার কমে আসবে। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি এবং ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণও হতে পারে।