‘শেখ হাসিনার সরকারের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাতেই বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে কম’, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
‘তথ্য-উপাত্তই বলে দেয়, বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে তো বটেই, ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো থেকেও অনেক কম এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকারের যথোপযুক্ত ব্যবস্থাই এর কারণ’, বলেন তিনি।
ওয়ার্ল্ডোমিটার উপাত্ত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত রোগীদের ১.৪৮ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছে, যা ভারতে ৩.২ এবং পাকিস্তানে ২.১৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এ মৃত্যুহার শতকরা ৫.৯৬, যুক্তরাজ্যে ১৪.৩৬, স্পেনে ১০ এবং ইতালিতে ১৪.১১ শতাংশ। এ পরিসংখ্যানই বলে, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে দেশে করোনায় মৃত্যু বহুদেশের চেয়ে অনেক কম।’
শনিবার (১৬ মে) ঢাকায় তথ্যমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবদানকালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ‘সরকার মানুষ বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’ মন্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরে জবাব দেন।
এসময় ‘গবেষণা সংস্থার নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো’ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগে গজিয়ে ওঠা সংস্থার মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ গুজব রটনার শামিল।’
‘করোনায় লোকক্ষয় রোধে সরকারের পদক্ষেপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ও প্রশংসার বদলে সমালোচনার জন্য বিএনপি প্রতিদিন মিথ্যাচারে ব্যস্ত’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এমনকি দ্য ইকোনমিস্ট এবং ফোর্বসও শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলোর প্রশংসা করেছে। প্রশংসা করতে পারে না শুধু বিএনপি।
বাণিজ্য নয়, সেবার মন নিয়ে এগিয়ে আসুন
‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো এই করোনা মহামারিতে সেবা না দিয়ে বরং বাণিজ্যমুখী আচরণ করছে’- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক যে, কিছু বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগীদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে আসেনি। অনেকগুলো হাসপাতাল, তারা নিজেরাই অনেকটা বন্ধ করে রেখেছে। সেখানে কোনো করোনা রোগী গেলে সেবা দেওয়া তো দূরের কথা, তাকে অন্য কোথাও ঠেলে দেবার চেষ্টা চলছে। যা আমরা প্রতিনিয়ত পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি।’
‘কিছু বেসরকারি হাসপাতালের এ আচরণ অত্যন্ত অমানবিক, কারণ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, হাসপাতালের উদ্দেশ্য যদি বাণিজ্য হয়, তাহলে তাকে হাসপাতাল বলা কঠিন।’
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হাসপাতালকে যখন ভাড়া নেবার কথা বলা হয়, তখন অস্বাভাবিক অর্থ দাবি করা হয়। ২০০ বেডের একটি হাসপাতাল মাসে ১৭ কোটি টাকা দাবি করেছে এবং একইসঙ্গে ডাক্তার-নার্সদের থাকা-খাওয়ার টাকাও দাবি করেছে, যা অস্বাভাবিক।
এই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাণিজ্যের মানসিকতা পরিহার করে সেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসবে আশা প্রকাশ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কিছু কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, তারা মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে, তাদের আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই এবং অন্যদের বলব, তাদের অনুসরণ করতে।
মনগড়া রিপোর্ট প্রকাশ গুজব রটনার শামিল
গবেষণা সংস্থার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্যপ্রচার হচ্ছে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দেখতে পাই, যখন দেশে কোনো দুর্যোগ দেখা দেয় বা মানুষ কোনো বিপদে পড়ে, কিছু নিয়ে শঙ্কা-আশঙ্কায় থাকে, তখন কিছু নতুন নতুন গবেষণা সংস্থা গজিয়ে ওঠে।’
‘এগুলোকে অন্য সময় আর দেখা যায় না বা এরা কোনো গবেষণাও করেনা’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকারের সমালোচনা করার জন্য ও বিরোধীদের হাতে সমালোচনার অস্ত্র তুলে দেবার জন্যই এরা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে।
‘এধরনের মনগড়া রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ গুজব রটনার শামিল এবং আমি আশা করব, গুজব রটনার অপরাধ সংঘটন থেকে সবাই বিরত থাকবে’, বলেন তথ্যমন্ত্রী।
এর আগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু ও সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান জিহাদের কাছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী হস্তান্তর করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।