চূড়ান্ত তালিকা করা হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৩৩৬টি নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের । চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) এসব প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই এসব প্রকল্পে ৫০ শতাংশের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। এসব নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের টাকা আর খরচ করা হবে না। বাকি যে ১০ হাজার কোটি টাকা আছে তা খরচ করা হবে করোনা মোকাবিলায়। চলতি অর্থবছর জুনে শেষ হবে। তবে স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রকল্পের টাকা কাটা হয়নি।
করোনা মোকাবিলা সরকারের কাছে এখন সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই অন্য প্রকল্পের টাকা কাটছাঁট করে করোনা মোকাবিলাসহ সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রম আরও জোরদার করবে সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ১৪টি প্রকল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, মধ্যম অগ্রাধিকার এবং নিম্ন বা কম অগ্রাধিকার। পরিকল্পনা কমিশনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার চারটি, মধ্যম অগ্রাধিকার ৮টি এবং নিম্ন অগ্রাধিকার দুটি। এর মধ্য থেকে নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পে আগামী এক বছরে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হবে না। বা বরাদ্দ দিতে হলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে।
এভাবে বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকা চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা বিভাগ। দেশের বাণিজ্যে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়ার আগেই বেশ মন্দাভাব ছিল রাজস্ব আহরণে। ফলে সরকারের পরিচালনব্যয় মেটানোর পাশাপাশি উন্নয়নকার্যক্রম সচল রাখতে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বাড়তে থাকে। এ অবস্থার মধ্যেই আসে করোনার মরণকামড়। এতে মারাত্মকভাবে কমতে থাকে রাজস্ব আয়ের গতি। ফলে অর্থসংস্থানের অভাবে বাজেট বাস্তবায়নে চাপ দেখা দেয়।
এ পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন ‘নিম্ন অগ্রাধিকার’ বা কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থখরচ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে যৌক্তিক কারণে ব্যয় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। পাশাপাশি ‘মধ্যম অগ্রাধিকার’ প্রকল্পের যেসব খাতে অর্থব্যয় না করলেই নয় এমন টাকা খরচের ক্ষেত্রে নিজস্বভাবে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। তবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্পের অর্থব্যয় অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এমন সব নির্দেশনা দিয়ে গত বুধবার (২২ এপ্রিল) একটি চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এই টাকা খরচ করা হবে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য। একইভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তালিকা করে সমস্ত প্রকল্প তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করছে। তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের ফলে সরকার আর্থিক সংকটে। করোনা মোকাবিলায় ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় চলমান মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন উপায়ে টাকা খুঁজছে। যেসব প্রকল্প অত্যাবশ্যকীয় নয়, সেসব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা আপাতত করোনা মোকাবিলায় খরচ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর এডিপির আওতাভুক্ত কোন কোন প্রকল্প থেকে টাকা কেটে করোনা মোকাবিলায় খরচ করা যায়, সেই কাজ শুরু করেছে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। কোন কোন প্রকল্প অত্যাবশ্যকীয় নয় কিংবা এমন দুর্যোগে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় সেসব প্রকল্প বাছাই করে কমিশন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সেটি হলো, চলতি অর্থবছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল এমন প্রকল্পের অব্যয়িত টাকা সরিয়ে করোনা মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের জন্য খরচ হবে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলা ও ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ৬৪ সচিবকে জেলা ভাগ করে দায়িত্ব বণ্টন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের জন্য সরকার ওই কর্মকর্তাদের জেলাওয়ারি দায়িত্ব প্রদান করেছে। এই কাজ চলমান রাখতে চায় সরকার। এই কাজেও অনেক টাকা ব্যয় হবে।
এই বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলা করা আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাত ও কৃষিখাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখানে টাকার প্রয়োজন। তাই সমস্ত মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলো তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছি। এরমধ্য থেকে সর্বোচ্চ ও মধ্যম ক্যাটাগরির প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পে আগামী এক বছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ থাকবে। নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পের টাকা করোনা মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে।