দেশে করোনা পরিস্থিতির দিন দিন অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যূ। এমন দুর্যোগের মধ্যেই দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপদাহ। এ কারণে আকাশে জমছে মেঘমালা। মেঘমালা থেকে আবার সাগরে তৈরি হচ্ছে নিম্নচাপ, বিপদ সেখানেই। নিম্নচাপ যখনই শক্তিশালী হবে, তখনই আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড়। এই এপ্রিলেই এমন ঘূর্ণিঝড় তৈরির আশঙ্কা দেখছেন দেশের আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মাসের শেষে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে বেশ কয়েকটি কালবৈশাখী ঝড়। তাপপ্রবাহের কারণে আকাশে মেঘমালা তৈরি হচ্ছে, আর এই মেঘমালা থেকেই নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ শক্তিশালী হলেই হবে ঘূর্ণিঝড়। চলতি মাসে এমন ঝড়েরই আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
করোনা প্রাদুর্ভাবের মাঝেই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস শঙ্কা তৈরি করেছে উপকূলের মানুষের জীবনে। দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে। এদের বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ের সময় স্থানীয় সাইক্লোন শেল্টারে অবস্থান নেন। বিশ্বব্যাপী করোনা মোকাবিলার প্রধান শর্ত হচ্ছে— সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় হলে সাইক্লোন শেল্টারে সেই দূরত্ব মেনে চলা কঠিন হবে। আগে ভাগে কোনও প্রস্তুতিও গ্রহণ করেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। তারা বলছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আগে যেভাবে লোক রাখা হতো এখন তা সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি মাসে স্বাভাবিক ঝড়বৃষ্টির পাশাপাশি একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। এ সময় সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হয়। সেটি বেশি শক্তিশালী হলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। তবে অনেক সময় আবার ঝড়ে রূপ নেওয়ার আগেই দুর্বল হয়ে যায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশের ঋতুগুলোর পরিবর্তন ঘটছে। আগে যেখানে বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী ঝড় হতো। এখন তা হচ্ছে না। এখন প্রায় মাসখানেক আগে থেকেই এই ঝড় শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে আকাশে অনেক মেঘমালার সৃষ্টি হয়। এসব মেঘমালা যদি সাগরে তৈরি হয়, তাহলে তা সাগরে জলীয় বাষ্প এবং পানি মিলে-মিশে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। এই নিম্নচাপ বেশি শক্তিশালী হয়ে গেলেই মুশকিল। তখন সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
অন্যদিকে চলতি এপ্রিলে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি একটি তীব্র তাপদাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের অন্য এলাকায়ও ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এক থেকে দুটি মাঝারি ধরনের অথবা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গত ২৪ ঘন্টায় রাঙামাটি ও সৈয়দপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।