গোটা বিশ্বকেই বদলে দিয়েছে করোনা। বদলে যাচ্ছে মানুষের আচার-আচরণও। সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারানোর ভয়ে কমে যাচ্ছে মানিবক বোধও। দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসেকরা আশঙ্কা করছেন। দেশে করোনা ভাইরাস প্রাণঘাতী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ব্যাপক হারে ভাইরাসটির পরীক্ষা বাড়ানো হবে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৭৯২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৫ লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হলে দেশে করোনার অবস্থার বোঝা যাবে। মাত্র ৪ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
বর্তমানে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে সাতটি ল্যাবে শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। আজ ঢাকার বাইরে আরেকটি ল্যাব চালু হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজাদ জানান, করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তাই শনাক্তকরণ পরীক্ষার পরিধি সারাদেশে বাড়ানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কয়েক হাজার মানুষের পরীক্ষা করে কিছুই বোঝা যাবে না। কয়েক লাখ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হলে দেশে আক্রান্তের হার বোঝা যাবে।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল বলেন, কয়েক লাখ মানুষের পরীক্ষা করা হলে দেশে করোনার সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে। এদিকে সুস্থরা ফের আক্রান্ত হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মাদারীপুরের একজন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর আবার আক্রান্ত হয়েছেন।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন পথে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩ জন দেশে প্রবেশ করেছেন। মাত্র ৪ হাজার মানুষ বাদে বাকি লোকদের মধ্যে কতজন আক্রান্ত তা কেউ বলতে পারছে না। শনাক্তের বাইরে থাকা লোকগুলো সমাজে মেলামেশা করছেন। নিজের অজান্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন কমরানা ভাইরাস। সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা এবং জনগণের জীবনযাপনের প্রক্রিয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই এটি চতুর্থ স্তর বা মহামারিতে পরিণত হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত রোগীদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি পালিয়ে না থেকে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঢাকায় ও নারায়ণগঞ্জে বেশি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। নতুন আক্রান্ত ৪১ জনের মধ্যে ২০ জন ঢাকার, ১৫ জন নারায়ণগঞ্জের। বাকিদের মধ্যে এক জন চট্টগ্রাম, এক জন কুমিল্লা ও এক জন কেরানীগঞ্জের। নারায়ণগঞ্জকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের নতুন রোগী পাওয়ার পর ঢাকার নয়টি এলাকার বিভিন্ন বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। ঐ এলাকার কেউ এখন বাইরে বের হতে পারবে না, সেখানে কেউ ঢুকতেও পারবে না। সংক্রমণ শুরুর দিকে ঢাকার মিরপুরের টোলারবাগে রোগী পাওয়ার পর ঐ এলাকা আগেই লকডাউন করা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার পুরান ঢাকা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, বছিলা, বাড্ডা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ভবন লকডাউন করার ব্যবস্থা নেয় পুলিশ।
কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করতে পরীক্ষা বাড়াতে বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, চিকিৎসকেদর সুরক্ষায় পিপিইরও কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্সে বিভিন্ন স্থানের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় নয়টা এবং ঢাকার বাইরে সাতটা ল্যাব বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর শুধু ঢাকায় আইইডিসিআরেই পরীক্ষা হতো। পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এখন ঢাকার বাইরেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করাকে নিয়ামক মনে করছেন গবেষকেরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,‘পিপিই যা লাগে দেবেন। পিপিই অনেক পাচ্ছি, দিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আরো দেব। প্লেগের কথা শুনেছি, বসন্তের কথা শুনেছি। আমাদের দেশে এখন করোনার থাবা এসেছে। তবে আমরা এখনো অন্য দেশের তুলনায় ভালো আছি। মৃত্যুর সংখ্যাও কম, আক্রান্তের সংখ্যাও কম।’ পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সেজন্য কোয়ারেন্টাইনে যারা আছেন, তাদের সেই অবস্থায় থাকা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।