আজ মহান স্বাধীনতা ও দিবস। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ঢাকা ছাড়া সারাদেশে ওড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। যে ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আজ মহান স্বাধীনতা দিবস এবং ৪৯তম জাতীয় দিবস। বেদনাকে প্রতিজ্ঞায় পরিণত করে যুদ্ধের শপথ নেওয়ার দিন আজ।
সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দুইশ’ বছরের ব্রিটিশ-বেনিয়া শাসনের অবসানের পর ২৪ বছর ধরে চলে বিজাতীয় ভাষাভাষী গোষ্ঠীর শাসন-শোষণ ও আগ্রাসন। ’৪৭-এর দেশভাগের পর পাকিস্তানি শাসকদের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মাতৃভাষার দাবিতে ’৪৮ সাল থেকে শুরু করে ’৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদান, সংগ্রাম-আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে রায়, ’৫৬-তে এসে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি আদায়, ’৬২-এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফার মধ্য দিয়ে বাঙালির মুক্তির সনদ ঘোষণা, ’৬৯-এর ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের বিদায় এবং ’৭০-এ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায়ই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এসেছে স্বপ্নের স্বাধীনতা।
যদিও নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ স্বাধীনতা দিবসের সব কার্যক্রম বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পুরো রাজধানী সেজেছে লাল-সবুজ আলোকসজ্জায়। সরকারি ভবন, পথ-ঘাটের সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সাজিয়ে তোলা হয়েছে জাতীয় পতাকা ও উজ্জ্বল আলোয়। সারাদেশের মানুষ দিনটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয় পেলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা শুরু করে। তাদের এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও বিশিষ্ট নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
তত্কালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি ছিল এরকম—‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাহাই নিয়া রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নকে জনমুখী ও টেকসই করতে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থবহ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশের সব নাগরিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।