করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরো’ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয়ভাবে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ ১০ নির্দে’শনা দিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি থাকবে। তবে এ ছুটি কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল এবং জ’রুরি সেবার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্যসচিব জানান, এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের সঙ্গে তাদের পৃথকভাবে বৈঠক হয়। দেশের জনগণের মঙ্গল কামনায় মন্ত্রিপরিষদ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, স্বাস্থ্য এবং রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞগণের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তার সে সব সিদ্ধান্ত সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পড়ে শুনান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
১. আগামী ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি। এরপর ২৭ ও ২৮ মার্চের সাপ্তাহিক ছুটি। এর সঙ্গে ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এরপর ৩ ও ৪ এপ্রিলের সাপ্তাহিক ছুটি সাধারণ ছুটির সঙ্গে যোগ হবে।
এ সময় সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ছুটির আওতায় থাকবে। তবে কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতালসহ জরুরি যে সব সেবা রয়েছে তার জন্য এ ছুটি প্রযোজ্য হবে না।
জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২. এ সময়ে যদি অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ করতে হয় তাহলে তাদের অনলাইনে সম্পাদন করতে হবে। সরকারি অফিস সময়ের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে তারাই শুধু অফিস খোলা রাখবে।
৩. গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করবে তাদের অবশ্যই করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাড়িচালক ও সহকারীদের অবশ্যই গ্লাভস এবং মাস্ক পরাসহ পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
৫. ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে প্রশাসনের সহায়তায় নিয়োজিত থাকবে সেনাবাহিনী। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে তারা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা ও সন্দেহজনকদের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরতরা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে কোনো ধরণের অবহেলা করছে কি না তা পর্যালোচনা করবে সেনাবাহিনী।
৬. করোনা ভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের কোনো ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয়, তাহলে সরকারের যে ঘরে ফেরার কর্মসূচি রয়েছে, তার অধীনে সহায়তা করার ঘোষণা করা হচ্ছে। এ জন্য জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন।
৭. সরকার ভাসানচরে এক লাখ লোকের আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যারা আগ্রহী তারা সেখানে যেতে পারবেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবেন।
৮. করোনা ভাইরাসজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় ও অন্নসংস্থানের অসুবিধা নিরসনের জন্য জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৯. ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে (বিএমএ) নির্দেশনা দিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৫০০ জন চিকিৎসকের তালিকা তৈরি ও তাদের প্রস্তুত রাখতে।
১০. সব রকম সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অসুস্থ ও জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যাওয়ার জন্য বারবার নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও তা ভঙ্গ করে মিরপুরে একজন বৃদ্ধ অসুস্থ অবস্থায় মসজিদে যান। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ওই ব্যক্তি পরে মারা যান।
এ বিষয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ইসলামী ফাউন্ডেশন এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে।