২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ছোড়া গ্রেনেডে গুরুতর আহত হন তিনি। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসার তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ২৪ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি আওয়ামী লীগের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। আজ, বৃহস্পতিবার তাঁর ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আইভি রহমান ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার চন্ডিবের গ্রামে সম্ভ্রান্ত কামাল সরকারের বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। আট বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল পঞ্চম। তাঁর বাবা মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। আট বোন, চার ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন পঞ্চম। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন ভৈরবেই সম্পন্ন হয়।
১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাদের বিয়ের সাক্ষী। আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তিনি বাংলায় বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন আইভি রহমান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে অস্ত্র চালনা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়া সেসময় তিনি জয়বাংলা রেডিওতে নিয়মিত কথিকা পাঠ করতেন।
১৯৭৫ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন আইভি। মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রায় ২২ বছর তিনি এই পদে দায়িত্বে ছিলেন।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি পুণঃগঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি একাধারে মহিলা সংস্থা ও জাতীয় মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এবং সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে তিনি থাকতেন সবার আগে। সভা সমাবেশে তিনি কখনই মঞ্চে বসতেন না। সভা স্থলের নিচে মাটিতে বা মঞ্চের সাইডে বসতেন তিনি। বিভিন্ন সময় গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ভৈরবের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। দুঃখী মানুষের পাশে তিনি সব সময় থাকতেন।
২১ আগস্ট আইভি রহমান মারাত্মক আহত হলে এ খবরটি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর স্বামী জিল্লুর রহমানকে জানানো হয়নি। তাঁকে জানানো হয় আইভি সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। ঘটনার দেড়দিন পর অর্থাৎ ২৩ আগস্ট জিল্লুর রহমান সত্যটা জানতে পেরে প্রথম ও শেষ বারের মতো হাসপাতালে আইভি রহমানকে দেখতে যান। ৪৬ বছরের জীবন সঙ্গীর সঙ্গে এটাই ছিল তার শেষ দেখা।
মুক্তিযুদ্ধ এবং সমাজসেবার ক্ষেত্রে অনন্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখার জন্য আইভি রহমানকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার- ২০০৯ (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়৷ জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের নির্মাণাধীন ছাত্রীনিবাস, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তোরণ ও নামফলক তাঁর নামে নামাঙ্কিত হয়েছে। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ কাঁপানো এই নেত্রী সারাজীবন থাকবে মানুষের হৃদয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ২৪ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস