বাংলাদেশকে আমি আমার পরিবার মনে করি। নিজের পরিবারের সদস্যদের প্রতি যে দায়িত্ব পালন করি, বাংলাদেশের মানুষের জন্যও অনুরূপ মনোযোগ দিয়ে কাজ করি। ক্ষমতার বিষয়টি আমার কাছে ভোগের নয়, এটি দায়িত্ব পালনের। uyriouবৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন এবং প্রশাসন কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটাই ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়। কারণ জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি মনে করি, এটা আমার দায়িত্ব।এ সময় কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আত্মসংযম, আত্মনিয়োগ এবং আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন।
বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে জানার পরিধি এবং জ্ঞানচর্চা বাড়াতে হবে। নিজের পরিবারের সদস্যদের মতোই দেশের মানুষের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে।দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশের দেশগুলোর তুলনায় আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। দেশের মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা ছিল আমাদের অন্যতম কাজ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এসব মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এজন্য কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছি, সে অনুযায়ী কাজ চলছে।দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করি। কারা ট্যাক্স দেয়, আমাদের দেশের মানুষ। কারা খাটে, আমার গরিব কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, তারাই তো খাটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের এ অর্থগুলো যথাযথভাবে দেশের উন্নয়নে যেন ব্যয় হয় এবং উন্নয়নটা যেন পরিকল্পিতভাবে হয়, মিতব্যয়ের সঙ্গে আমরা যেন আরও বেশি উন্নয়ন করতে পারি, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার সঙ্গে আত্মশুদ্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করে নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবসময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে।
জাতির পিতা বলেছেন, প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যেমন আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে, তেমনি আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং আত্মশুদ্ধিও করতে হবে।স্বনির্ভর হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্রঋণের ধারণা এবং জাতিসংঘে এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন আনার জন্য আমাদের সরকারই কাজ করেছে। তবে সেই সুবিধা নিয়ে নোবেল প্রাইজ পাওয়া একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লবিংও করা হলো। দুর্নীতির অভিযোগ দেয়া হলো আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। আমার ছেলেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডেকে অনেকবার চাপ দিয়েছে। তবে আমরা নতজানু হইনি। সততার জয় হয়েছে, দুর্নীতির অভিযোগ যে মিথ্যা, তা প্রমাণিত হয়েছে। আজ বাংলাদেশ নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর কাজ করছে। এর থেকে আমরা স্বনির্ভর হয়ে ওঠার আত্মবিশ্বাস পেয়েছি।
কর্মকর্তাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দেশে আজ ডিজিটাল সিস্টেমে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই মাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের কাজ করতে হবে। আর যেন আমাদের পিছিয়ে পড়তে না হয়। বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের রোল মডেল বলা হচ্ছে, অনেকে আমাদের উন্নয়ন ম্যাজিকের বিষয়ে জানতে চান। সবাইকে বলি, আমাদের দেশপ্রেমের কারণেই এই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে।
শাহবাগের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সচিব ফয়েজ আহমদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান।স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর কাজী রওশন আক্তার। অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন প্রশিক্ষণার্থী ফরাসউদ্দিন এনাম, তরিকুল ইসলাম ও রাহুল চন্দ্র।