ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল বুধবার রাত সোয়া একটার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ধানমন্ডির বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে শ্রমিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালিক ও শ্রমিকেরা ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে যেসব দাবি যৌক্তিক মনে হবে, সেগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যে লাইসেন্স দিয়ে তাঁরা এখন গাড়ি চালাচ্ছেন, তা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর মধ্যে তাঁরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে কাগজপত্র হালনাগাদ করবেন। বৈঠকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামসহ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের ধর্মঘট, কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধে গতকাল বুধবার কার্যত অচল হয়ে পড়ে পণ্য পরিবহন ও যাত্রীসেবা। ভোর থেকে ট্রাক–কাভার্ড ভ্যানের ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ ছিল। দেশের বন্দর, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মোকাম থেকে বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
গত শনিবার থেকেই দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে। এরপর তা উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়েছে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পুরোটা এবং ঢাকা বিভাগের কিছু জেলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের পর দেশের পূর্বাঞ্চলও অচল হয়ে পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। পুলিশ বুঝিয়ে–শুনিয়ে বেলা দুইটার দিকে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর পূর্বাঞ্চলে অল্প হলেও বাস চলাচল শুরু হয়।
গতকাল কমপক্ষে ২৭টি জেলায় ধর্মঘট পালন করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। গাজীপুর ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট না মেনে যাঁরা যানবাহন চালিয়েছেন, তাঁদের অনেকে শ্রমিকদের মারধরের শিকার হয়েছেন। শ্রমিকনেতারা বলছেন, আজ থেকে বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট স্থগিত করা হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার ও কাল শুক্রবার ঢাকায় সারা দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা হবে। সেখান থেকে ধর্মঘটের বদলে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবহনমালিক শ্রমিক সূত্রগুলো বলছে, পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকদের মূল লক্ষ্যই ছিল চাপ দিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা, আইনের প্রয়োগ কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া ও শিথিল করা। ইতিমধ্যে তারা এই কাজ করতে পেরেছে। কারণ, নতুন আইনে এখনো কাউকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। আইন অমান্যে পুলিশ মামলা দিচ্ছে না। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দিন দিন শিথিল হচ্ছে।