ঝড়-সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাসের মত নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। শক্তি বাড়িয়ে অতি ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ধেয়ে আসছে ‘বুলবুল’। আজ শনিবার রাত থেকে রবিবার সকালের মধ্যে যেকোনো সময় বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সুন্দরবনের ব-দ্বীপ অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে এটি। প্রতি মুহূর্তে শক্তি সঞ্চয় করে বুলবুল সুন্দরবন উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান গতিপথ অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।
সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। বুলবুলের প্রভাবে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সারাদেশে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। উপকূলীয় এলাকায় বইছে দমকা হাওয়া। ১০ বছর পর এই প্রথম কোনও ঘূর্ণিঝড়ের বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতেই গভীর নিম্নচাপ থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম)-এ পরিণত হয় ‘বুলবুল’। এখন সেটি ‘ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বা অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, বুলবুল ছোবল দেয়ার সময় যদি সাগরে জোয়ার থাকে তবে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠতে পারে। আর ভাটা থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।
বুলবুলের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানান, এটি শনিবার সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১০ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৭৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ কখনো বেশি হচ্ছে, কখনো কম হচ্ছে। তবে এর গতিপথ ও তীব্রতা যেকোনো মুহূর্তে বদলে পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরে যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, উপকূলে আঘাত করার আগে সাধারণত সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার কখনো-কখনো দুর্বল হওয়ার নজিরও রয়েছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’র বলয়ে থাকা সাত জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। জেলাগুলো হলো- খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা।
‘বুলবুল’ মোকাবেলায় ২২টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে সরকার। শনিবারের জেএসসি-জেডিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জরুরি সেবা দিতে উপকূলীয় বেশিরভাগ উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
এরইমধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এনজিও কর্মী, রোভার ও স্কাউট সদস্যরা।