ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর আগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তি নিয়ে এসে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন।
নবীজীর পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বাংলাদেশের আকাশে আজ ১৪৪১ হিজরি সনের পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। বুধবার থেকে পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস গণনা শুরু হবে। সেই হিসেবে আগামী ১০ নভেম্বর রবিবার (১২ রবিউল আউয়াল) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকারমস্থ সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা সূত্রে চাঁদ দেখার কথা জানা গেছে। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।
সভায় ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, চকবাজার শাহী মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান ও লালবাগ শাহী জামে মসজিদের খতিব মুহাম্মদ নিয়ামতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী হলো বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুলিল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগতকূল শিরোমনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র জন্ম ও ওফাত দিবস।
এখন থেকে ১৪ শ ৪৯ বছর পূর্বে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের ঘনঘোর তমসা ছাওয়া ৫৭০ খৃষ্টাব্দের সুবহে সাদেকের সময় জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীর সম্ভান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলো করে ’ত্রিভূবনের প্রিয় মোহাম্মদ আসেন দুনিয়ায়। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠেন। চলিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুয়্যতের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী।
কিন্তু অসভ্য মূর্খ জাতি তার দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূলের ওপর নির্যাতন শুধু করেনি, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহ সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশ্বে শাস্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজী রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যান্বেষী মানুষ তার সাথী হতে থাকে।
অন্যদিকে কাফিরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসূল সাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লামকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসূল (সা.) এর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তাবায়ন করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান নামে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহুদি খ্রিস্টান মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় যথার্থভাবে।
২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলে পাক সাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। ‘আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।’