টং দোকানদার থেকে মোহাম্মদপুরের “সুলতান” রাজীব

আওয়ামীলীগের সহযোগী সংঘটন যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজীবের উত্থানের পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস। যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়েছিলেন তিনি। কোথাও গেলে সঙ্গে থাকত দামি গাড়ি আর মোটরবাইকের বহর। ভিআইপি মর্যাদায় এই বহর রাস্তা দিয়ে চলত। রোদে গেলে আশপাশের কেউ ধরে রাখে ছাতা। তার এই আয়েশি জীবনের জন্য অনেকেই তাকে মোহাম্মদপুরের সুলতান বলেও আখ্যা দিত।

রাজীবের এই পরিবর্তন ঘটে মাত্র চার বছরে। এই চার বছরে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পত্তি, গাড়ি আর বাড়ি। ইচ্ছে হলেই বদলাতেন গাড়ির মডেল।

গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিগত চার বছরে কমপক্ষে ১০টি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি কিনেছেন রাজীব। এর মধ্যে সাতটি গাড়ির নম্বর পাওয়া গেছে। গাড়িগুলো হল, ঢাকা মেট্রো-ম ০০-৬৬৪, ঢাকা মেট্রো-শ ০০-০৬৬৪, মেট্রো-ল-০০-০৬৬৪, মেট্রো-ঘ-১৮-২৬৯৩, ঢাকা মেট্রো ভ-১১-০১৭১, ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৪-২৮৫৪, ঢাকা মেট্রো-খ ১১-৭৭৮২। এই গাড়িগুলোর বেশ কয়েকটি নম্বরের রেজিস্ট্রেশন নেই। ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে তিনি গাড়িগুলো চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে।

ফুটপাতের সামান্য টং দোকানদার ছিলেন রাজীব। সেই রাজীব এখন এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। মালিক হয়েছেন কয়েকশ\’ কোটি টাকার। তাকে গ্রেফতারের পর বাসা থেকে পাওয়া গেছে ৫ কোটি টাকার চেক। গড়েছেন স্থাবর সম্পত্তি। রয়েছে ঢাকায় বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। রাজীবকে গ্রেফতারের পর তার সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তার অপরাধ জগত নিয়ে উঠে আসছে নানা অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টং দোকানদার থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া রাজীবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাতমসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের বাসাসহ এলাকার অনেকের জমিদখলের অভিযোগও রয়েছে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় একাধিক বাড়ি, জমি ও একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক তিনি।

এখন বসবাস করেন আলিশান বাড়িতে। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। যার মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কারও।

সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীর হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া রাজীব ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেন। এর পর থেকেই মূলত ভাগ্য আরও খুলে যায় তার। আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে।

রাজীবকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম বলেন, রাজীবের একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে। এ বাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস তিনি বাহির থেকে আমদানি করে নিয়ে এসেছেন। এটি তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে। তার কিন্তু আসলে কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। সিটি কর্পোরেশন থেকে যে সম্মানী পায়, সেটি তার প্রধান আয়। এ ছাড়া বাকি সব অবৈধ লেনদেন।

রাজীবের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে ভূমিদখলের বিরুদ্ধে এবং উনি কাউন্সিলর হওয়ার পর পরই ২০১৬ সালে তিনটি কোম্পানি খুলেছেন সিলিকন, এক্কা, নাইমা এন্টারপ্রাইজ। দুঃখজনক হলেও এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে আসলে জমিদখল করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় লোকজনকে অত্যন্ত কমমূল্যে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেছেন- এমন তথ্য আমরা পেয়েছি। সেসব অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখব। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে- এসব অপরাধ করতে গিয়ে যেসব লোকজনকে ব্যবহার করেছেন, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা আশা করছি, তদন্তে এ বিষয়গুলো বেরিয়ে আসবে।

Scroll to Top