ঢাকায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আরো দুটি মেট্রোরেল

রাজধানীতে আরো দুটি মেট্রোরেল স্থাপনে ৯৩ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর স্টেশন এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত ৩১ দশমিক ২ কিলোমিটার মেট্রোরেল স্থাপনে ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এতে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার গঠিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। অন্যদিকে অনুমোদিত হেমায়েতপুর-আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর ১-মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুনবাজার-ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৫ বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। এই লাইনের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ (আমিনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত) এবং সাড়ে ৬ কিলোমিটার (হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত) এলিভেটেড আকারে স্থাপন করা হবে। এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্পটিও চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গতকাল এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মেট্রোরেলসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি সংশোধিত। সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩০ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল হতে ৫১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ আকারে ৬৯ হাজার ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে।

সভা শেষে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) আওতায় সড়ক ও রেল উভয় সুবিধাসম্পন্ন সমন্বিত সড়কব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়ে বলেছেন, মেট্রোরেলের রুট এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে অধিক জনগণ এর থেকে সুবিধা পায়। মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না। আগামীতে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) শেয়ারবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকার জন্য মেট্রোরেল তৈরির পরামর্শও দেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি আবাসিক ভবনে আর গ্যাসের সংযোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে মানুষকে অভ্যস্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন থেকে যেসব সরকারি বাড়ি তৈরি করা হবে, তার সবগুলোতে মসকিউটো নেট থাকতে হবে, আবর্জনা ডিসপোজালের ব্যবস্থা থাকতে হবে। বাড়ির নিচতলায় গাড়িচালকদের জন্য বিশ্রামের জায়গা থাকতে হবে। সচিবদের সরকারি বাসায় থাকতে হবে।

একনেক সভায় ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেনী-নোয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বেগমগঞ্জ থেকে সোনাপুর পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডোমার-চিলাহাটি-ডাউলাগঞ্জ, ডোমার (বোড়াগাড়ী)-জলঢাকা (ভাদুরদরগাহ) এবং জলঢাকা-ভাদুরদরগাহ-ডিমলা জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৭৩১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট জেলা মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ছয়না-যশোদল-দৌদ্দশত বাজার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প, ১ হাজার ৭১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), ১০৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরপুরের পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, ১২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার আজিমপুরে বিচারকদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প (প্রথম সংশোধিত), ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেচ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন (মুহুরি সেচ প্রকল্প) প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনর্বনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
:ইত্তেফাক

Scroll to Top