২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ২০৯ জন। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনও পথ চেয়ে বসে আছেন, ছোট্ট শিশুরা অপেক্ষা করছে, বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়, সন্তানের দুঃশ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের কান্না-আহাজারি আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকাল প্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পাচ্ছে। গুম একটি ভয়ংকর মানবতাবিরোধী অপরাধ। গুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য।
তিনি বলেন, মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের (এএলআরসি) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৪৩৫ জনকে গুম করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লোকজনকে তুলে নেয়া ও গুমের সঙ্গে জড়িত হিসেবে ডিবি, গোয়েন্দা বিভাগ, পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) ও র্যাবের নাম উঠে এসেছে। একই প্রতিবেদনে নাগরিকদের তুলে নেয়া ও গুমের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ বার বার অস্বীকার করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। নিখোঁজ হওয়ার কয়েক সপ্তাহ/মাস পরে এক চতুর্থাংশ মানুষকে পাওয়া যাচ্ছে বন্দি অবস্থায়, তাদের বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে নানা রকম বানোয়াট ফৌজদারি অভিযোগ। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে যারা ঘরে ফিরছেন তারা ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদ মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে না। সুতরাং এতেই বোঝা যায়, এতসব গুমের হোতা কারা। গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের মদদদানকারীরাও বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না। প্রতিটি গুমের তদন্ত ও বিচার একদিন হবেই।