ছাত্রদলের দুই পদে লড়বেন যারা

 যারা ২০০০ সালে কিংবা এর পরে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তারাই কেবলমাত্র লড়তে পারবেন ছাত্রদলের নেতৃত্বের জন্য। এমন নিয়ম জারি হওয়ার পর থেকে মূলত নিয়মিত ছাত্রদের ভাগ্য খুলেছে। যারা বর্তমানে ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসতে চান, তারা কখনই এমন চিন্তা করছিলেন না যে, এ সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ পাবেন। কারণ ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর বছর দশেক কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলেও গত প্রায় ২০ বছর সেটা আর হয়নি। ‘ওপর মহল’ যাদের চেয়েছেন তারাই এসেছিলেন নেতৃত্বে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, ছাত্রদের নিয়ে যে সংগঠন পরিচালিত হওয়ার কথা সেখানে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত যারা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা কখনই নিয়মিত ছাত্র ছিলেন না। বয়স কিংবা ছাত্রত্ব কিছুই ছিল না তাদের। তবুও তারা ছিলেন ছাত্রদলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। তবে, তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পরই ছাত্রদল নিয়ে নতুন কিছু করতে চেয়েছেন। তার চিন্তার ফসল হলো, গত ৩ জুন কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কয়েকটি সিদ্ধান্ত সামনে নিয়ে আসা।

গঠন করা হয় সার্চ কমিটি, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও আপিল কমিটি। ১৫ জুলাই কাউন্সিল করতে জুন মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে যারা বাদ পড়েছেন তারা এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তালা লাগিয়ে দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। কয়েক দফা বিক্ষোভ আর অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন। তাদের বক্তব্য, ‘আমরা দীর্ঘদিন ছাত্রদল করে কী পেলাম।’ বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচির জেরে এসময় বহিস্কার করা হয় ১২ নেতাকে। এসব নিয়ে পুরো জুলাই মাস চলে নানা দেন দরবার। হস্তক্ষেপ করতে হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে। অবশেষে গত ৬ জুলাই বিক্ষুদ্ধ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপে বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ বৈঠকের পর সমস্যার সমাধান হয়। ১৩ আগস্ট পুনরায় তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। নতুন তফসিলে সভাপতি-সম্পাদক পদে ভোট হবে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর।

এরই মধ্যে এ দুই পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য নিয়মিত ছাত্র নেতারা উঠে পড়ে লেগেছেন। যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।  বিভিন্ন জেলা শাখা সফর করে কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করছেন। সরাসরি মোবাইলে ফোন করে অথবা ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজের প্রার্থীতা। কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সরেজমিন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এবার দেশের বৃহত্তম এ ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি পদে আগ্রহীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম ফকির লিঙ্কন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল আলম টিটু, ঢাবির যুগ্ম-সম্পাদক হাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মামুন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু, ঢাবির সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভির রেজা রুবেল, বিলুপ্ত কমিটির বৃত্তি ও ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এরশাদ খান ও বিলুপ্ত কমিটির সহ-সম্পাদক ফজলুর রহমান খোকন।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-সম্পাদক তানজিল হাসান, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিয়া পাঠান পাপন, বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মুতাসিম বিল্লাহ, ঢাবির যুগ্ম সম্পাদক শাহনেওয়াজ ও ঢাবির জসিম উদ্দিন হলের খায়রুল আলম সুজন।

সভাপতি প্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সহ-সভাপতি সাজিদ হাসান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তিসহ আগামী দিনে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণআন্দোলন গড়ে উঠবে। সেই আন্দোলনে আমি বিগত দিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই। সেজন্য আশা করি কাউন্সিলররা আমার ওপরে আস্থা রাখবেন।

অপর সভাপতি প্রার্থী আসাদুল আলম টিটু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মা আপোসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঢাকার রাজপথে কার্যকর ও দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা করতে চাই। দীর্ঘ দিনের জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সংগঠনকে গতিশীল করতে সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের প্রতিটি ইউনিটে কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢেলে সাজানোর ইচ্ছা আছে। যেখানে বিগত  আন্দোলনে মামলা হামলায় নির্যাতিত সাহসী ত্যাগী মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাসকেন্দ্রীক ও আন্দোলনমুখী ছাত্রদল প্রস্তুত করাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হবে।

একমাত্র নারী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাদিয়া পাঠান পাপন বাংলানিউজকে বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ৭৫ বছর বয়সে জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্য কোনো কিছুর সঙ্গে আপস করেননি। তার মুক্তির আন্দোলনে নারীরাই বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখার জন্যই এ পদে প্রার্থী হয়েছি। আমি তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা একজন কর্মী। রাজপথে বার বার নির্যাতিত হয়েছি। আশা করি তৃণমূলের কর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবেন।

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তানজিল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। আশা করি কাউন্সিলররা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আমাদের প্রিয় নেতা, প্রিয় অভিভাবক তারেক রহমান ছাত্রদলের আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের একটি যোগসূত্র স্থাপন করেছেন। আমি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে এ যোগসূত্র ও আদর্শিক বন্ধনকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনকে বেগবান করার চেষ্টা করবো।

Scroll to Top