আরো চার দিন বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকার আশঙ্কা

পানি উন্নয়ন বোডের্র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি আরো চার দিন অপরিবর্তিত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। গঙ্গা ও পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা নেই। পানি হ্রাস অব্যাহত থাকলেও সুরমা-কুশিয়ারা ও ঢাকার আশপাশের নদ-নদী ছাড়া গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত দেশের প্রধান নদ-নদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এরমধ্যে ধলেশ্বরীর এলাশিন পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার ও যমুনার বাদুরাবাদে ৭৮ ও ফুলছড়ি পয়েন্টে ৬৮ সেন্টিমিটার বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে হতে পারে ভারী বৃষ্টিপাত। এদিকে কুড়িগ্রামে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ। জামালপুরে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখেরও বেশি। গাইবান্ধায় এ সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ত্রাণের অপ্রতুলতা, বিশুদ্ধ পানির অভাব, গো-খাদ্যসংকটে বন্যাতর্রা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বেড়েছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। গতকাল বন্যার পানিতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ইত্তেফাকের আঞ্চলিক অফিস, জেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তিন শিশুর মৃত্যু : গতকাল পানিতে ডুবে জামালপুরে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো মুখ শিমলা গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে শারমিন আক্তার (১২) এবং সাপধরী ইউনিয়নের আকন্দপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোফাজ্জল আকন্দের তিন বছরের মেয়ে ময়ছন বেগম। এছাড়া শেরপুর জেলা সদর উপজেলায় মৃগী নদীতে পানির স্রোতে নিখোঁজ বয়রা গ্রামের মুস্তফার ছেলে সুমনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।

এদিকে জামালপুর জেলায় ৬২টি ইউনিয়ন ও সাতটি পৌরসভায় বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বানভাসি মানুষ নৌকা দেখলেই হাত বাড়িয়ে ডাকতে থাকেন, ‘আমরা পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, আমাদের ত্রাণ সহায়তা করুন।’ বন্যার্তদের বাড়িঘরে এখনো তিন থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত পানি রয়েছে। রান্না করে খাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে। বিধ্বস্ত হয়েছে রাস্তাঘাট, বাঁধ, ঘরবাড়ি। নেই শৌচকর্ম সম্পন্ন করার মতো নিরাপদ ব্যবস্থা। বন্যাকবলিত এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ এখনো বাঁধে, সড়কে, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ও নৌকায় এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রিত। এখনো বাড়িঘরে বন্যাতর্রা ফিরতে পারছেন না। গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলার ২১টি এলাকায় পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে এখনো একাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ও লোকসংখ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে গাইবান্ধা শহরের একাধিক এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে।

ডিমলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : প্রথম দফা বন্যার ছয় দিন পর গতকাল নীলফামারী জেলায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের অবনতি হয়েছে বন্যার। নতুন করে ডিমলা উপজেলার ১৫টি গ্রামের প্রায় ৯ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সারিয়াকান্দিতে ব্রিজের সংযোগ সড়কে ধস : সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি কমলেও বাঙ্গালীনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রবলস্রোত হুমকির মধ্যে পড়েছে জোড়গাছা-সারিয়াকান্দি সড়কের সাড়ে তিনশ ফুট গার্ডার ব্রিজ। ব্রিজের পশ্চিম ধারের সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে। পাউবো জানায়, গতকাল বাঙ্গালী নদীতে আরো ২৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে পাবনার সাঁথিয়ায় নাগড়েমরা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বাঙ্গালী-করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়ার শেরপুরের সাহেব বাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ২০টি গ্রামের মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে হুমকিতে পড়েছে শংকরদহ গুচ্ছগ্রাম। ফরিদপুরের সদরপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁর পানি ঢুকে তিন তিনটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ১৮টি বিদ্যাপীঠ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তলিয়ে গেছে মৈনট ঘাট : পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনট ঘাট। ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে দোহার ও নবাবগঞ্জের চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মৈনট ঘাটে গড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীসহ পানিবন্দি কয়েক গ্রামের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোডের্র তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর পর্যন্ত পদ্মার পানি ভাগ্যকূল পয়েন্টে বিপত্সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো তেমন কোনো বড়ো ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ মইনুদ্দিন। খবর : ইওেফাক

Scroll to Top