গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে। পাউবোর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৮টি স্থানে ভেঙ্গে ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। বাঁধ, সড়ক, নৌকায় ও উঁচু স্থানসহ ১৮৪টি সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলো খাবার, সুপেয় পানি ও শৌচাগার সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গৃহপালিত পশু নিয়ে।
সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলরুটের গাইবান্ধা সদরের বাদিয়াখালি থেকে ত্রিমোহিনী পর্যন্ত রেল পথের প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ ডুবে গিয়ে কিছু স্থানে স্লিপার, পাথর ও মাটি সরে গেছে। এতে গত বুধবার থেকে পাঁচদিন যাবত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গাইবান্ধা শহরে অধিকাংশ রাস্তাঘাট, প্রধান দুটি কাঁচাবাজার, বিপণী বিতান, সরকারি বেসরকারি একাধিক অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও পানিতে তলিয়ে আছে। পানিবন্দি ৪০৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, গত চব্বিশ ঘণ্টায় তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার, নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘটের পানি ১২ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার পানি এক সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার তিন সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা রেলস্টেশন মাষ্টার আবুল কাশেম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া রেলস্টেশন থেকে সান্তাহার এবং গাইবান্ধা রেলস্টেশন থেকে লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের মধ্যে ট্রেন চলাচল করছে। অপরদিকে গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গাইবান্ধা-বালাসি সড়কেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার দুইটি পৌরসভাসহ ৫১টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রামের পাঁচ লাখ ১৪ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে আছেন। যাদের ৪৫ হাজার ৪৯৫টি বসতবাড়ি পানির নিচে। তার মধ্যে পানিবন্দি ৭৪ হাজার ১৬৯ লোক জেলার ১৮৪টি সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এবং ২৩৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৩ কিলোমিটার বাঁধ ও ২১টি কালভার্ট। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৯২৮ হেক্টর বিভিন্ন ফসলি জমি। ৪০৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম বন্ধ। ভেসে গেছে ছয় হাজার ৬৫৮টি পুকুরের মাছ। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে নয় হাজার ২২৪টি টিউবওয়েল। বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে ৭৫টি মেডিকেল টিম।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন জানান, বন্যা কবলিত উপজেলা গুলোতে জেলা ত্রাণ ভাণ্ডার থেকে এক হাজার মেট্রিক টন ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ছয় হাজার কার্টুন শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৮৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ নয় লাখ টাকা ও তিন হাজার ৫৫০ কার্টুন শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।