বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রাষ্ট্র ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার পার্থক্যের অবসান ঘটেছে। রাষ্ট্র, এক ব্যক্তি ও দল এখন একাকার। এক ব্যক্তির অঙ্গুলি হেলনে জঙ্গলের শাসন চলছে। আইন-আদালত, বিচার-আচার, প্রশাসন সবকিছু মিডনাইটে সিলমারা ভোটে নির্বাচিত অবৈধ সরকারের করতলে। বিচারের বাণী আলো-আঁধারে নিভৃতে কাঁদছে। বিরোধী দলকে নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করতে আদালতকে নগ্নভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে এক ভয়াবহ অশনি সংকেত সুষ্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আদালতের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সরকারের অসহিষ্ণুতা ফুটে উঠেছে। তাতে ভিন্ন মতকে দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হচ্ছে। সুতরাং বিএনপিসহ সরকারবিরোধী দলগুলো যেন অপরাধী ও দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না দেওয়ার পেছনে সরকারের হস্তক্ষেপ জনগণের কাছে দিবালোকের মতো স্পষ্ট।’
আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, গত বুধবার ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা) ট্রেনবহরে হামলার সম্পূর্ণ বানোয়াট ও প্রহসনের সাজানো মামলায় বিএনপির ৯ জনের ফাঁসি, ২৬ জনের যাবজ্জীবন দিয়েছে একটি আদালত। যে ঘটনায় কেউ হতাহত হয় না সেই মামলায় ফাঁসি হওয়ার কোনো আইন পৃথিবীতে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। এই ধরনের রায় পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন হয়ে থাকবে। ২৪ বছর আগে পরিকল্পিতভাবে শুধু তামাশা করার জন্য নিজ দলীয় লোকদের দিয়েই ট্রেনের কাছে ফাঁকাগুলির ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গণফাঁসির রায় প্রমাণ করে দেশ এখন দুঃশাসনের কালো রাতে আচ্ছন্ন।
সর্বশেষ ঈশ্বরদীর এই হাস্যকর মামলার রায় জনগণের কাছে স্পষ্ট করেছে যে, কী পরিমাণ অপশাসন-কুশাসন আর জুলুম চলছে। যাদের ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশের এফআইআর এ নাম পর্যন্ত ছিল না। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর দলীয় কর্মসূচিতে ট্রেনবহর নিয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে যাত্রাবিরতি করলে ওই ট্রেন ও শেখ হাসিনার কামরা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। মামলাটির সময় পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্টও দাখিল করে। পরে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনার নির্দেশে আজ্ঞাবহ পুলিশকে দিয়ে মামলাটি পুনঃতদন্ত করে নতুনভাবে ঈশ্বরদীর শীর্ষস্থানীয় ৫২জন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীকে এ মামলার আসামি বানানো হয়। তাদের অপরাধ তারা বিএনপি করে। এই কারণে বিচারের নামে আওয়ামী প্রহসনের নির্মম শিকার হলেন তারা।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে সরকারের পরিণতি খুব ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, যে সরকারের জনগণের ম্যান্ডেট নাই তারা কী করবে না করবে আমরা জানি না, তবে এই যে সংগ্রাম, তা এই পর্যায়ে থাকবে না, এর স্ফুলিঙ্গ দাবানল আকারে ছড়িয়ে পড়বে একদিন।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, মেনে নেন। কিন্তু আপনারা মধ্যরাতের নির্বাচন করবেন সেটা মেনে নিতে হবে, আপনারা একতরফা নির্বাচন করবেন সেটা মেনে নিতে হবে, আপনারা ইভিএম দিয়ে একটা জোচ্চুরি নির্বাচন করবেন সেটা মেনে নিতে হবে, আপনারা গ্যাসের দাম বাড়াবেন সেটা মেনে নিতে হবে, আপনারা বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন সেটা মেনে নিতে হবে। আপনারা কারা?
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, ফিরোজ-উজ জামান প্রমুখ।