রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে দায় স্বীকার করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মারাত্মক ভুল করেছে সংস্থাটি। সমন্বিত পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা পরিষদে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ার কারণেই সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনটিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চেষ্টা চালাচ্ছে দাবি করলেও এবার খোদ সংকটের সমাধান না হওয়ায় নিজেদের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে জাতিসংঘ। গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘদূত গার্ট রোজেন্টের লেখা ৩৪ পৃষ্ঠার এক ইন্টারনাল রিভিউয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মারাত্মক ভুল করেছে জাতিসংঘ। সমন্বিত পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা পরিষদে যথেষ্ট সমর্থন না পাওয়ার কারণেই সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। আর এ কারণেই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা বিরোধী হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে পারেনি সংস্থাটি।
জাতিসংঘের ঐ ভুলকে পরিকল্পিত ব্যর্থতা হিসেবেও আখ্যা দেন তিনি। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে সংস্থাটি কোন ধরনের অবস্থান নেবে তা নিয়েও দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
জাতিসংঘের দূত গার্ড রোজেনথাল এক বিবৃতিতে বলেন, নিঃসন্দেহে অনেক জাতিসংঘের পদ্ধতিগত অনেক কারণে অনেক ভুল হয়েছে এবং সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ৩৪ পৃষ্ঠার ওই অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা প্রতিবেদন থেকে তিনি বলেন, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ পরিকল্পনা না নিয়ে বিচ্ছিন্ন কৌশল অবলম্বন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চলতি বছর মিয়ানমারে ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখতে গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ড রোজেনথালকে নিয়োগ দেন মহাসচিব অ্যান্থনিও গুয়েতেরেস। মিয়ানমারে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড নিয়ে রোজেনথাল বলেন, এটা সমষ্টিগত দায়িত্ব ছিলো। একে সত্যিকার অর্থে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা বলা যেতে পারে। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মিয়ানমারে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন নাকি কূটনৈতিক তৎপড়তা চালাবেন তা নিয়েই একমত হতে পারছিলেন না। আর তৃণমূল থেকে জাতিসংঘের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিবেদন।
রোজেনথাল বলেন, জাতিসংঘ তখন মিয়ানমারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী করতে এবং একই সাথে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো। তিনি বলেন,মিয়ামারকে মানবাধিকর লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করতে যোগ্য ভূমিকা রাখেনি জাতিসংঘ। তবে তাদের উন্নয়নের ব্যাপারে প্রশংসার ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল তারা।
জাতিসংঘের দূত বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিত্বে জাতিষংঘের সামষ্টিক সদস্যরাই এরজন্য দায়ী। যখন যেই সমর্থন প্রয়োজন ছিলো তারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
লেটেস্টবিডিনিউজ/এনপিবি