প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নয় মিয়ানমার। রোববার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। সম্প্রতি তিন দেশে প্রধানমন্ত্রীর ১১ দিনের সফর সম্পর্কে জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কাজ চলছে। মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহী নয়।তিনি বলেন, \’রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলছি, জাপানের সঙ্গে কথা বলছি, অন্যদের সঙ্গে কথা বলছি– সবাই বলছে, হ্যাঁ তারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের ফিরে যাওয়া উচিত।\’
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, \’রাখাইনে তো এখনও কিছু মানুষ আছে। আমাদের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে এসেছে। সবকিছু যখন প্রায় চূড়ান্ত, তখন দেখা গেল রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না। তারা ফিরে না যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করলো। কিন্তু এই আন্দোলনের উসকানিটা কারা দিল?\’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক– এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ রোহিঙ্গারা ফিরে গেলে বিদেশ থেকে তাদের কাছে সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এই যে একটা বিশাল অংকের টাকা-পয়সা আছে…। তাই তারা চায় না রোহিঙ্গারা ফিরে যাক।
সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনেও তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে ওআইসির সদস্য দেশগুলো আশ্বাস দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার কাজ করছে। তবে সমস্যাটা হয়েছে মিয়ানমারকে নিয়ে। তারা কিছুতেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, জাপান সফরকালে এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক উন্নয়নে জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া ফিনল্যান্ড সফরের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, এদেশের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাই করতে শিগগিরই ফিনল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ মে থেকে ৭ জুন জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী সফরের শুরুতে গত ২৮ মে জাপানের রাজধানী টোকিও যান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে আয়োজিত নিক্কেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া তিনি সেখানে তার সম্মানে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন এবং জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে প্রাতরাশ গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন।
গুলশানের হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাপানের নাগরিকদের পরিবার এবং জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) সভাপতি শিনিচি কিতাওকা পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ মে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪তম অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশান (ওআইসি) সম্মেলনে যোগ দেন।
তিনি মক্কাতে পবিত্র ওমরাহ পালন এবং মদীনাতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
সৌদি আরব সফর শেষে ত্রিদেশীয় সফরের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী পাঁচদিনের সরকারি সফরে ৩ জুন ফিনল্যান্ড পৌঁছান।
ফিনল্যান্ডে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুন দেশটির প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েস্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ৫ জুন তার সম্মানে অল ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।
তিন দেশে ১১ দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে দেশে ফেরেন।
লেটেস্টবিডিনিউজ/কেএস