ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে ২২ মে। প্রথম দিন ৩১ মে ও পরের দিন ১ জুনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়েছে। তবে শুক্রবার (২৪ মে) সকাল থেকে কমলাপুরে টিকিট প্রত্যাশীদের জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। টিকিট নিতে কেউ লাইনে দাঁড়িয়েছেন মধ্যরাতে, কেউবা ভোরে। প্রতিটি লাইন এঁকে বেঁকে চলে গেছে স্টেশনের বাহিরের দিকে।
শুক্রবার (২৪ মে) দেয়া হচ্ছে ২ জুনের অগ্রিম টিকিট। এ দিনের বনলতা এক্সপ্রেসের টিকিট নিতে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাত থেকে কমলাপুর স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সাজ্জাত হোসেন নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে লাইনে দাঁড়িয়েছি, এখানেই সেহেরি খেয়েছি। আমার সিরিয়াল আসতে আসতে টিকিট পাব কি-না আশঙ্কায় রয়েছি। কেননা টিকিট বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জানা গেল এসির টিকিট শেষ। আজ মনে হয় সবচেয়ে বেশি মানুষ টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে। এখানে দায়িত্বরতরা বলছেন গত দুই দিনের তুলনায় আজ উপস্থিতি অনেক বেশি।
অপরদিকে লাইনে দাঁড়িয়েও অ্যাপের মাধ্যমে রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট কাটার চেষ্টা করছিলেন ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়ার পর প্রতিদিনই রেলসেবা অ্যাপে টিকিট সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। কিন্তু না পেয়ে আজ ভোরে বাধ্য হয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছি। এর ফাঁকে অ্যাপেও চেষ্টা করছি। কিন্তু অ্যাপ শুধু ঘোরে আর ঘোরে, কোনো কাজ হয় না।
রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে, অনলাইনে ঈদের সময় একসঙ্গে প্রায় দেড় লাখ হিট পড়ে। তবে সিএনএসবিডির যে সক্ষমতা তাতে মাত্র ২০ হাজার লোড নিতে পারে। সে কারণে সাধারণ মানুষের অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে। অনলাইনে ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি না হলে অবিক্রিত টিকিট কাউন্টার থেকে দেয়া হবে।
রেলের অনলাইন টিকিট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড বাংলাদেশ (সিএনএসবিডি) সূত্র জানায়, এবার ৫০ ভাগ টিকিট অনলাইনে তিন পদ্ধতিতে দেয়া হচ্ছে। প্রথমত মোবাইল এসএমএসে, দ্বিতীয়ত ওয়েবসাইট এবং তৃতীয়ত রেলের টিকিট কাটার সর্বশেষ ফিচার অ্যাপ। সব মিলিয়ে মোট টিকিটের ৫০ ভাগ এ তিন পদ্ধতিতে দেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে সবগুলো আন্ত:নগর ট্রেন মিলিয়ে দিনে প্রায় ৩০ হাজার ট্রেনের টিকিট রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ ভাগ রেল কমকর্তা কর্মচারী ও পাঁচ ভাগ ভিআইপি ছাড়া বাকি সব টিকিটের ৫০ শতাংশ অনলাইনে পাওয়ার কথা। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে সেবাটা ঠিকমতো দেয়া যাচ্ছে না।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, প্রতিটি লাইনে মানুষ সুশৃংখলভাবে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। এছাড়া ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।
যাত্রীর সুবিধার্থে এবার পাঁচটি স্থান থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট দেয়া হচ্ছে। যমুনা সেতু দিয়ে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কমলাপুরে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে বিমানবন্দর স্টেশনে।
ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকিট তেজগাঁও স্টেশন, নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের টিকিট বনানী স্টেশন থেকে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ফুলবাড়িয়া (পুরান রেলভবন) থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
একজন যাত্রী চারটি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
আগামীকাল ২৫ মে ৩ জুনের এবং ২৬ মে ৪ জুনের টিকিট দেয়া হবে। এছাড়া ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে যা চলবে ২ জুন পর্যন্ত।