চাকরির প্রস্তাব পেলেন সন্তানের জন্য দুধ চুরি করা সেই বাবা

সন্তানের জন্য দুধ চুরি করে ধরা পড়া বাবা কে চাকরি দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সুপার শপ স্বপ্নসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি সুপার শপ থেকে সন্তানের জন্য দুধ চুরি করতে যেয়ে ধরা পড়েন ওই বাবা।

তিন মাস চাকরি না থাকায় সন্তানের জন্য সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ থেকে দুধের একটি প্যাকেট চুরি করে ধরা পড়েন তিনি। বিষয়টি সবার নজরে আসে সেখানে কর্তব্যরত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলামের ফেইসবুক পোষ্ট থেকে। জাহিদুল ইসলামের পোষ্টটি ভাইরাল হয়েছে ইতিমধ্যে।

পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে যে পোস্ট দেন জাহিদুল ইসলাম। সেখান থেকে জানা যায়: বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর এক সড়কের চেকপোস্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাত পৌনে ৯টার দিকে তার দায়িত্বস্থল থেকে একটু দূরে মানুষের ভিড় দেখতে পেয়ে তিনি এক উপপরিদর্শককে সেখান পাঠান ঘটনা জানার জন্য।

কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী এক লোককে টেনে-হিঁচড়ে জাহিদুল ইসলামের সামনে নিয়ে আসে। জাহিদুল ইসলামকে জানানো হয় লোকটা চুরি করে পালাচ্ছিল। এক সিকিউরিটি গার্ড জানান, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল। এর পর জাহিদুল ইসলাম তার কাছ থেকে জানতে পারেন তিন মাস হলো বেকার। ছোট বাচ্চার দুধ কেনার টাকা নাই। তাই তিনি বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করেছেন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন,“গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট। বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিঁচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম। একজন বলল, ‘স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল।’ পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বলল, ‘স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল।’আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বলল, ‘স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল।’ আমার খটকা লাগল, আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘দুধ’? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, ‘স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট।’ আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, ‘স্যার, তিন মাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।’

সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল। মনে হলো কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে। ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বলল, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম। আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…। কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। হয়ত আমি ভালো চাকরি করে আজ ভালো আছি। কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরুপায়। এর দায়ভার কার?”

Scroll to Top