ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনের পুড়িয়ে হত্যার মামলার আসামি শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শাহাদাতকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি সূত্র।
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হওয়ার পর তার মুক্তির দাবিতে ‘সিরাজ উদ দৌলা সাহেবের মুক্তি পরিষদ’ নামে যে কমিটি গঠন করা হয় ওই কমিটির সদস্য ছিলেন নূরউদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন। শাহাদাতের আগে নূরউদ্দিনকেও গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এর আগে ৭ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।
নুসরাতের স্বজনরা জানান, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।
তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা করেছেন। এতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে শামীম, জাবেদ ও নূর উদ্দিন ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র।