সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির একটি জবানবন্দি।
গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষাকেন্দ্রে দগ্ধ হওয়া নুসরাত ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলার দ্বারা শ্লীলতাহানি শিকার হন বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার পর পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন নুসরাত।
থানায় পুলিশের কক্ষে দেওয়া নুসরাতের সেই জবানবন্দির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে অধ্যক্ষের কক্ষে কি ঘটেছিল সেই বিবরণ দিয়েছেন নুসরাত। কীভাবে পিয়ন দিয়ে ডেকে এনে অধ্যক্ষ তার শরীরে হাত দেন সে ঘটনাও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বর্ণনা করতে শোনা যায় তাকে।
নুসরাতের দেওয়া জবানবন্দির ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলেও বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ মুখে খোলেননি। ভিডিওটির সূত্রও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।
ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার
তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।