রাজধানীর হাতিরঝিলের ‘বিষফোড়া’ খ্যাত বিজিএমইএ ভবনের জায়গাটি দিলেও তা যেন খালের উপর না যায় সে ব্যাপারে আগেই সতর্ক করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার সেই সতর্কতা না মেনে পোশাক মালিকরা ভবনটি খালের ভেতরে নির্মাণ করেন, যেখানে যাওয়ার জন্য সেতু বানানো হয়। পরবর্তী বিএনপি সরকারের আমলে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।
বুধবার বহুল আলোচিত বিজিএমইএর নতুন ভবন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। উত্তরার ১৭নং সেক্টরের ব্লক এইচ ওয়ানে নির্মাণাধীন বিজিএমইএ কমপ্লেক্স ভবনের নিচতলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলতে হাইকোর্টের রায় রয়েছে। তবে ওই ভবন টিকিয়ে রাখতে বিজিএমইএ নেতারা বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। দীর্ঘ আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হন তারা৷ ভবনটি সরাতে একাধিকবার সময় নেয় বিজিএমইএ।
পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ শতাংশ কমমূল্যে উত্তরার ১৭নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমি দেয়া হয়। সেখানে ১৩ তলা এই ভবন নির্মিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে নতুন এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ছয় তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া ভবনটির পুরো কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুনে। তবে কয়েকটি তলার নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় ও হাইকোর্টের নির্দেশের বাধ্যবাধকতায় চলতি মাসেই বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় উত্তরায় স্থানান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ নেতারা।
হাতিরঝিলে তাকাতে গেলে বিজিএমইএ ভবন একটি বাধা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাতিরঝিলকে চমৎকারভাবে উন্নয়ন করেছি। এখানে দুটি কাজ। ঢাকা শহরের যে রাস্তা ছিল বেশির ভাগই ছিল উত্তর-দক্ষিণমুখী রাস্তা। পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা ছিলই না। সেই যোগাযোগটা যাতে সুন্দর হয়, পাশাপাশি এই জলাধারকে যেন ধরে রেখে দৃষ্টিনন্দন করা যায় সেটা করতে গিয়ে অনেক মামলা মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এই বিল্ডিংটা সত্যি কথা বলতে কী- তাকাতে গেলে একটা বাধার মতো মনে হয়।’
পোশাক মালিকদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই (হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন) জায়গাটা আমাদের দেয়া। বারবার বলেছিলাম ভবনটা খালের উপর যেন না যায়। সোনারগাঁও হোটেলের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে বলেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যখন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এলাম তখন দেখলাম খালের উপর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেখানে ব্রিজ দিয়ে ভবনটিতে যেতে হচ্ছে।’
‘আমাদের এমনিতেই জলাধরের সমস্যা। আগুন লাগলে পানির অভাব। সেগুনবাগিচায় একটা খাল ছিল। ধোলাইখালেও ছিল। কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবনটা ভেঙে ফেলতে হবে। বিশাল একটা জায়গা দিয়েছি। সেখানে ভবন হচ্ছে৷ এই কাজটা যে হচ্ছে তা ইতিবাচক। কিন্তু তারা ভবনের জন্য জায়গা কিনতে চাননি। আমরা দিয়েছি। যেহেতু কোর্টের রায় সেটা কার্যকর করতে হবে৷ যদি চলে আসা যায় কোর্টের রায় মানা হবে। নতুন ভবন উদ্বোধন করে দিয়েছি। ছয় তলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজ চলতে থাকবে।’
নতুন পণ্যের নতুন বাজার খুজতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানের কূটনীতি কিন্তু অর্থনৈতিক কূটনীতি৷ প্রতিটি দূতাবাসকে নির্দেশনা দেয়া আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ঢেকে দীর্ঘ মিটিং করেছি, কোন দেশে বাংলাদেশের কোন কোন পণ্যের বাজার রয়েছে তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১০ বছরে পোশাক খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে আট হাজার টাকা করেছি। মালিকদের জন্য উৎসে করে ছাড় দিয়েছি। বাজেটে কর বসাতে পারি না, কিন্তু কমাতে পারি।’
পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করতে হবে৷আপনাদের নতুন বাজার খুঁজতে হবে এবং গার্মেন্টেসের কিন্তু নতুন নতুন আইটেমও করা যায়। একেক দেশে একেক রকম চাহিদা। ডিজাইন এবং ফ্যাশন ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাশন ডিজাইনিং ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে। পোশাক খাত আরও সমৃদ্ধ হোক সেটাই প্রত্যাশা করি।’
নতুন ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কোর্টের রায় অনুযায়ী ১২ এপ্রিল আমাদের সময় শেষ হয়ে যাবে। ১২ তারিখ থেকেই আমরা নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হবো।’
গণভবনে এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
উত্তরার নতুন ভবনে এসময় বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রথম সহসভাপতি মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সহসভাপতি এম এম মান্না কচি, সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, বিইউএফটির ভাইস চ্যান্সেলর মোজাফফর ইউ সিদ্দিকী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হকসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।