১৫ মাসের বাছুরের দাম ৭৫ লাখ টাকা

বকনা বাছুর কিনে এখন নাজেহাল অবস্থা সাঁইথিয়ার আবদুল মহালাজের। সেই বাছুর নাকি এখন ‘কপিলা’ গাই। তাই ২৫০০ টাকায় কেনা ওই বাছুরের দাম উঠল ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু তারপরেও সেই বাছুর বিক্রি করতে নারাজ আবদুল মহালাজ।

বরং তিনি সরকার অথবা সহৃদয় কোনো ব্যক্তির কাছে ১৫ মাসের বাছুরের নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষিত ঘর চেয়েছেন। বাছুর যে দামি এটা বুঝতে পেরে রাতের ঘুম চলে গেছে মালিকের। তার আশঙ্কা, বাছুরটি চুরি যেতে পারে। কিংবা বাছুর না পেয়ে তার ক্ষতিও করতে পারে কেউ। তাই নিতান্তই সাধারণ ছাপোষা এক শ্রমজীবী পরিবার বাছুর কিনে রাতারাতি একদিকে নামি অন্যদিকে দামি হয়ে উঠেছে।

কিন্তু কী এমন ঘটল যাতে একবছরের মধ্যে একটা বাছুরের আকাশ ছোঁয়া দাম উঠল? বাছুরের মালিকের ভাষ্য, ‘মনে হয় এটা আমাকে আল্লাহ্ দান হিসেবে পাঠিয়েছেন। বাছুরটি প্রজননের আগেই দুধ দেওয়া শুরু করেছে। যা নাকি স্বর্গের কপিলা গাই দিতে পারে।’ তার মতে, শরিয়তের মেতে এই গরু আল্লাহর কৃপাধন্য।

শাস্ত্র মতে এমন কামধেনু গাইয়ের কথা জানতে পেরে স্বভাবতই গত কয়েকদিন ধরে ভারতের সাঁইথিয়া থানার মাঠপলশা গ্রামের পূর্বপাড়ায় ভিড় জমতে শুরু করেছে ভক্ত থেকে উৎসাহীদের।

বাছুরের মালিক মহালাজ জানান, বছর খানেক আগে সাঁইথিয়া গরুর হাট থেকে আড়াই হাজার টাকায় তিন মাসের বাছুরটি তিনি কিনে আনেন। কিন্তু হঠাৎই বাছুরটির কপালে ত্রিশূলের মতো একটি চিহ্ন দেখেন। সারা গায়ে জটার মতন কিছু একটা বেরতে থাকে। এরই মধ্যে বাঁটট থেকে দুধ ঝরতে থাকে ১৫ মাসের বাছুরটির।

ক্রমে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের দুই যুবক উত্তরপ্রদেশের একটি সংস্থার নাম করে ৭৫ লাখ টাকা দামে বাছুরটি কিনতে চেয়ে মহালাজের বাড়ি আসে বলে তার দাবি। তারপর থেকেই অনিশ্চয়তায় ভুগছে ওই পরিবার। ছয় ভাইয়ের সংসারে পাঁচিলহীন ঘরে খোলা উঠানে বাছুরটি সারারাত বাঁধা থাকে। পরিবারের আশঙ্কা, বাছুরটি চুরি যেতে পারে। কপিলাকে সেবা করার নামে যদি কেউ কিছু খাইয়ে দেয়। তাই ২৪ ঘণ্টা নজরদারি বসেছে বাছুর ঘিরে।

এরই মধ্যে কপিলার জন্য পাঁচামির এক শিল্পপতি মশারি ও পাখা কিনে দিয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশের কর্মকর্তা, সবাই এসেছেন কামধেনু গাই দেখতে। যদিও জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক তথা পশুপ্রেমী দীনবন্ধু বিশ্বাস বলেন, ‘নিউট্রটপিক হরমোনের অস্বাভাবিক ক্ষরণের জন্য এই ঘটনা’

সিউড়ি পশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ কুমার বলেন, ‘পোলাকট্রিন হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় থাকার জেরে এই কাণ্ড ঘটে।এই গাইকে প্রজনন করানো মুশকিল। তবে এর দুধে বা শরীরে অলৌকিক কিছু নেই।’ যদিও বাছুরের মালিক বলেন, ‘কপিলার দুধ অনেক লোকে কিনতে চাইছেন। গোবর ও গোমূত্র তারা জমিতে ফেলে দিচ্ছেন।’

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে