রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক দম্পতিই শেয়ার করেন। তাতে পরিচিতদের অনেক লাইক-কমেন্টও পড়ে।
তবে সম্প্রতি পাকিস্তানি এক দম্পতির শেয়ার করা একটি ছবি রীতিমতো ইন্সটাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবিতে এমন কী আছে, যার জন্য তা নেটিজেনদের চর্চার বিষয়ে পরিণত হয়েছে?
ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রেস্তরাঁয় স্ত্রীর পাশে বসে রয়েছেন স্বামী। তবে সাধারণত বোরকার আড়ালে স্ত্রী থাকলেও এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বোরকার আড়ালে রয়েছেন স্বামী!
এই ছবির মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ছক বাঁধা লিঙ্গবৈষ্যম্যের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন পাকিস্তানের ওই তরুণী।
‘দ্য মিউলি ওয়েডস’ নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ওই দম্পতি ছবিটি পোস্ট করেছেন দিন দুয়েক আগে। ছবির সঙ্গে রয়েছে ওই তরুণীর বার্তাটিও। নিজেকে একজন চেনা ছকে বাঁধা পুরুষের দৃষ্টিতে রেখে পোস্টটি লিখেছেন তিনি। একেবারে ঝাঁঝালো ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে নারী-পুরুষের সামাজিক ভেদাভেদের আসল ছবি তুলে ধরেছেন তাতে।
ইনস্টাগ্রামের পোস্টে ওই তরুণী লিখেছেন, ‘এই আমার সুন্দরী স্বামী। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না, কত সুন্দর সে। কেননা, তার সৌন্দর্য লুকানো রয়েছে। কারণ, আমিই এর একমাত্র হকদার। ওর যা কিছু, ওর সাফল্য, স্বপ্ন— ওর সমস্ত জীবন আমার কাছে বেধে রাখা আছে। ওর দিকে কুনজর দেওয়াটা পাপ। তাই ওর ঘরে থাকাটাই আমার পছন্দের। কারণ, এ দুনিয়াটা তো ভালো নয়। যাই হোক, ও যখন আমার সঙ্গে বাইরে বের হয়, তখন অবশ্য তা ঠিক আছে।’
তথাকথিত আধুনিক সমাজেও যে বহু ক্ষেত্রেই নারীর অবস্থান শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনকারী হিসেবেই গণ্য করা হয়, তা বোঝাতে ওই পাক তরুণীর তীক্ষ্ণ মন্তব্য, ‘আমরা শুধু এখানেই খেতে আসি। কারণ, এখানে স্টেরয়েড ছাড়া চিকেন পাওয়া যায়। তাছাড়া আমরা খুবই স্বাস্থ্য সচেতন। বিশেষ করে যখন জানি স্টেরয়েড দেওয়া চিকেন খেলে যৌনক্ষমতায় প্রভাব পড়তে পারে। আমি তা চাই না, কারণ ওর বেঁচে থাকার প্রধান উদ্দেশ্যই তো সন্তান উৎপাদন করা এবং আমাকে মা হতে দেওয়া। ফলে যাই হোক না কেন, আমি ওকে এখানেই খেতে নিয়ে আসব।’
এখানেই থেমে থাকেননি ওই তরুণী। নারীদের যে প্রায়ই যৌন হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়, সে ছবিটিই তুলে ধরেছেন তার লেখনীতে। তিনি লিখেছেন, ‘বাইরে বের হলে কীভাবে যে নিজেকে লুকিয়ে রাখে ও, এটা আমার খুব ভালো লাগে। কেননা ও তো “খুলি তিজোরি” (খোলা সিন্দুক)। আর আমি চাই না যে ও যৌন হেনস্থার শিকার হোক। আর যদি তা-ও হয়, তবে ভাগ্যের পরিহাস ভেবে তা স্বীকার করে নেব। সেই সঙ্গে আশা করব, হেনস্থাকারীর যেন শেষমেশ সাজা হয়।’
স্বাধীনতা ভোগ করার ক্ষেত্রেও যে নারী-পুরুষে প্রবল সামাজিক ভেদাভেদ রয়েছে, তা বোঝাতেও ব্যঙ্গকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন ওই তরুণী। তিনি কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘আমি অবশ্য যেখানে খুশি যেতে পারি, যা খুশি করতে পারি। আমি ওকে বাইরে কাজে যেতে এবং ড্রাইভিং করতে দিই। কারণ, আমি প্রবলভাবে সমান অধিকারে বিশ্বাস করি।’
পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই ব্যঙ্গাত্মক পোস্টের পর নেটিজেনরা কার্যত দুইভাগে ভাগ হয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। কারও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ, ‘এত সুবিধা দেবেন না। এর পরে তো লিঙ্গসাম্যের সায় দিতে হবে।’
অনেকে আবার কটাক্ষ করে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, আপনার ওকে কাজ বা ড্রাইভিং করতে দেওয়া উচিত নয়।’
ব্যঙ্গের আড়ালে এই পোস্টের সমর্থনে মন্তব্যের পাশাপাশি অনেকের সমলোচনারও শিকার হয়েছেন ওই পাকিস্তানি তরুণী। সেই সমালোচকদের উদ্দেশে তার মন্তব্য, ‘আপনাদের ব্যঙ্গের অর্থ বোঝানোর দায়িত্বটা আমার কাজ নয়। আপনাদের উদ্দেশেই এই পোস্ট করা হয়েছে।’