৩০তম বিসিএস ছিল আমার জীবনের প্রথম চাকরির পরীক্ষা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অনার্স শেষ করেছি সবে। অবশ্য মাস্টার্সের পর কিছুদিন কাজ করেছি রেডিও টুডেতে স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে। প্রস্তুতি না বলে চর্চা বলাই ভালো। এই চর্চাই আমাকে প্রথম বিসিএসে সাফল্য এনে দিয়েছে। এই বিসিএসে নন ক্যাডার পদে নিয়োগ পেয়েছিলাম। বর্তমানে আমি সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত আছি বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অধীনে। এ ক্ষেত্রে খুব কাজে দিয়েছে গ্রুপ স্টাডি। বাইরে ছোটাছুটি করতে হয়নি। আমরা তিন ভাই ছিলাম বিসিএস প্রার্থী।
বাসায় সবাই মিলে গ্রুপ স্টাডি করতাম। লাইব্রেরিতে পড়াশোনাও করতাম একসঙ্গে। এভাবে অনেকটাই হয়ে গিয়েছিল বিসিএসের প্রস্তুতি।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় মূলত তিন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় পরীক্ষার্থীরা। ইংরেজি, গণিত ও সময়স্বল্পতা। এই তিনটি সমস্যার সমাধান একটাই—অনুশীলন। আর সবার মতো ইংরেজিভীতি আমারও ছিল। শোনা, বোঝা ও লেখার চর্চা করেছি নিয়মিত। ইংরেজি মুভি, ডকুমেন্টারি, বিভিন্ন ফিচার, গল্পের বই পড়ে ইংরেজি শেখাকে আনন্দময় করার চেষ্টা করেছি। গণিতের প্র্যাকটিস প্রথম বর্ষ থেকেই করতাম। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান খুব কাজে দিয়েছে। সময় নির্দিষ্ট করে নিয়ে বিগত প্রশ্নপত্র সমাধান করাটা সময় সমন্বয় করতে সাহায্য করেছে। যেহেতু আমার পড়াশোনার বিষয়ও ছিল লেখালেখিভিত্তিক, তাই দ্রুত লেখার প্র্যাকটিস আগে থেকেই ছিল। প্রতিদিন নিয়ম করে বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান করেছি। পড়াশোনা করতেই ভালো লাগত, আমি আমার বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস থার্ড ছিলাম। কোনো কোচিং করিনি বিসিএসের জন্য। আমার বড় ভাইদের গাইডলাইন নিতাম, আর বাসায় প্র্যাকটিস করতাম।
আমি যখন বিসিএস ভাইভা বোর্ডে অ্যাটেন্ড করি, তখন আমার মাস্টার্স পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার মধ্যেই ভাইভা দিয়েছি। অনেক নার্ভাস ছিলাম, এর আগে ভাইভা দেওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। সৌভাগ্যক্রমে ভাইভা বোর্ডের সদস্যরা আমার প্রতি অনেক সদয় ছিলেন। গতানুগতিক প্রশ্নই ছিল বেশির ভাগ। যেমন নিজের পরিচয়, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও আমার একাডেমিক বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। তবে যে প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়েছি খুব গুছিয়ে অল্প কথায় দিয়েছি। যা পারি না সরাসরি বলেছিলাম, ‘দুঃখিত স্যার, আমার উত্তরটি জানা নেই’। ‘আমি ভুলে গেছি’, ‘পড়েছিলাম’ কিংবা ‘মনে করার চেষ্টা করছি’ বলে তাঁদের বিরক্তি বাড়াতে চাইনি। আমার এই দিকটাই তাঁরা সম্ভবত পছন্দ করেছিলেন।
পরে আরও বিসিএস দিয়েছিলাম। ৩৩তম বিসিএসের ভাইভা বোর্ডে বাধল বিপত্তি। পিএসসির সদস্য ওয়াজেদ আলী স্যারের ভাইভা বোর্ডের অভিজ্ঞতা ছিল সবচেয়ে মজার ও ভয়ানক। বোর্ডে তিনি থাকবেন জেনেই নার্ভাসনেস বেড়ে গিয়েছিল। তিনি ইংলিশের খুঁটিনাটি ব্যাকরণগত ভুল ধরেছিলেন। এতে সহজ ও জানা অনেক প্রশ্নের উত্তরও ভুলে গিয়েছিলাম। ৩৩তম বিসিএসে আরো একটি কঠিন বিষয় ছিল দুই বেলা পরীক্ষা। সকালের পরীক্ষা শেষ করে যানজট ঠেলে ফিরে ফের বিকেলের পরীক্ষা দেওয়া, আবার পরের পরীক্ষার প্রস্তুতি—সেটি ছিল কঠিন ব্যাপার।
আমার অফিস আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস উত্তরা। প্রথম যেদিন জয়েন করি, সেদিন খানিকটা ভীত ছিলাম এই ভেবে, কাজটি পারব কি না। আমার কাজটি জনসেবার। আমি নিজেও জনগণের বাইরের কেউ নই। তাই যাঁরা আমাদের অফিসে আসেন, আমি তাঁদের নিজেদের একজন ভেবেই সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের সিস্টেমে বিভিন্ন সমস্যা ছিল, এখনো আছে। আমরা সেগুলো সমাধান করার জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। এখন আমাদের সেবার মান আগের চেয়ে অনেক উন্নত। ২০১৭ সালে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছি শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার সম্মাননা। সূত্র- কালেরকণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম