মঙ্গলের পাথরে প্রাচীন প্রাণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

নাসার মঙ্গল গ্রহে পাঠানো অনুসন্ধানযান পারসিভিয়ারেন্স আজ পর্যন্ত তার সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কারটি করেছে। রহস্যময় লাল গ্রহটিতে প্রাচীন প্রাণের সম্ভাব্য লক্ষণ পেয়েছে এটি।

ছয় চাকার রোবটিক অনুসন্ধানযান পারসিভিয়ারেন্স চলতে চলতে ‘চেয়াভা জলপ্রপাত’ নামের একটি কৌতূহলকর, তীর আকৃতির শিলার সামনে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সেখানে শতকোটি বছর আগের অণুজীবের জীবাশ্ম থাকতে পারে।

তখন আজকের ঊষর মঙ্গল গ্রহ ছিল জলময়।

পারসিভিয়ারেন্স প্রাচীন নদী উপত্যকা নেরেতভা ভ্যালিস অতিক্রম করার এক পর্যায়ে গত ২১ জুলাই রহস্যময় শিলাটিতে গর্ত করে এর ভেতরের নমুনা সংগ্রহ করে। রোভারটি এর সংগ্রহ করা নমুনাগুলো পেটের নিচে সাবধানে রেখে দেবে। এগুলো পরে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে।

তখন আরো বিশদ বিশ্লেষণ করা হবে পাথরের নমুনা। মঙ্গল গ্রহের পাথরে অণুজীবের জীবাশ্ম মিললে তা হবে পৃথিবীর বাইরে প্রথম কোনো প্রাণের নমুনার প্রমাণ। অর্থাৎ মহাকাশ গবেষণায় এক ঐতিহাসিক ঘটনা।

ক্যালটেকের প্রকল্প বিজ্ঞানী কেন ফারলে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘চেয়াভা জলপ্রপাত’ হচ্ছে পারসিভিয়ারেন্সের পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে রহস্যময়, জটিল ও সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ শিলা।

তিনটি সম্ভাবনাময় সূত্র নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন চলছে। পাথরটির লম্বালম্বি বরাবর সাদা ক্যালসিয়াম সালফেট শিরা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যে একসময় পানি প্রবাহিত হতো, এটা তার স্পষ্ট প্রমাণ। ওই শিরাগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি লালচে মধ্যবর্তী অঞ্চল, যা জৈব যৌগে পরিপূর্ণ। রোভার পারসিভিয়ারেন্সের ‘শারলক’ যন্ত্রটি এটি শনাক্ত করেছে।

পিআইএক্সএল নামের আরেকটি যন্ত্রে স্ক্যান করে কালো প্রান্তঅলা ছোট ছোট সাদাটে ছোপ পাওয়া গেছে। ছোপগুলোর মধ্যে এমন রাসায়নিকের উপস্থিতি মিলেছে, যা সম্ভবত কোনো প্রাচীন অণুজীবের শক্তির উৎস ছিল।

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির পারসিভিয়ারেন্স গবেষকদলের সদস্য ডেভিড ফ্ল্যানারি বলেন, পৃথিবীর পাথরের মধ্যে এই ধরনের বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে প্রায়ই মাটির কিছু নিচে বাস করা অণুজীবের জীবাশ্ম রেকর্ড থাকে।

তবে মঙ্গল গ্রহের প্রাচীনকালে প্রাণের অস্তিত্ব নিশ্চিত করার আসল পরীক্ষাটি হবে পারসিভিয়ারেন্সের মূল্যবান পাথরের নমুনাগুলো পৃথিবীতে ফেরত আনার পর। নাসা এবং ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যমে নমুনাগুলো ২০৩০-এর দশকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কথা। এ সময় লাগবে মূলত পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের মধ্যে বিশাল দূরত্বের জন্য। সূত্র : এএফপি

Scroll to Top